নিউজিল্যান্ডের জয়, স্বপ্ন ভাঙল শ্রীলঙ্কার

0
205

আশার নিবু নিবু প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে প্রয়োজন ছিল জয়। কিন্তু সেই প্রদীপও একেবারে নিভে গেল। শেষ চ্যালেঞ্জেও মুখ থুবড়ে পড়ল শ্রীলঙ্কা। নতুন বলে ম্যাট হেনরি ও হেনরি শিপলির আগুনে বোলিংয়ের পর ড্যারিল মিচেলের দুর্দান্ত যে মঞ্চ গড়ে, সেখানে দাঁড়িয়ে দারুণ ইনিংসে নিউজিল্যান্ড জিতিয়ে দিলেন উইল ইয়াং। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে হ্যামিল্টনে শুক্রবার (৩১ মার্চ) শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারাল নিউজিল্যান্ড। কিউইরা সিরিজ জিতে নিল ২-০ ব্যবধানে। একটি ম্যাচ ভেস্তে গেছে বৃষ্টিতে।

আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে ২৪ ম্যাচের পথচলা শেষে শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট কেবল ৮১। পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবস্থান নবম। স্বাগতিক ভারতসহ শীর্ষ অন্য সাত দল সরাসরি খেলবে ২০২৩ বিশ্বকাপে। শ্রীলঙ্কার সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার আশা তাই আনুষ্ঠানিকভাবেই শেষ। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও দুইবারের রানার্স আপদের এখন তাকিয়ে থাকতে হবে বাছাইপর্বে। নিউজিল্যান্ড সুপার লিগ শেষ করল ১৭৫ পয়েন্ট নিয়ে। শীর্ষে নিজেদের অবস্থান আপাতত আরও সংহত করল তারা।সবশেষ দুই ওয়ানডেতে ৭৩ ও ৭৬ রানের পর এবার একটু উন্নতি হয় লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ে। তবে সেটিও বলার মতো নয়। ৪১.৩ ওভারে গুটিয়ে যায় তারা ১৫৭ রানে। ১০ ওভারে ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন হেনরি। আগের ম্যাচে ৫ উইকেট শিকারি শিপলি এবার নেন ৩ উইকেট। মিচেলেরও প্রাপ্তি ৩ উইকেট। রান তাড়ায় ৫৯ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড আর কোনো উইকেট না হারিয়ে জিতে যায় ৩২.৫ ওভারেই। তিনে নেমে ১১৩ বলে ৮৬ রান করে অপরাজিত থাকেন ইয়াং। আইপিএলের কারণে প্রথম পছন্দের একাদশের অন্তত ৬ জনকে পায়নি কিউইরা। তারপরও জিতে নিল ম্যাচ ও সিরিজ।

সেডন পার্কের উইকেটে ভয়ঙ্কর সিম মুভমেন্ট বা দারুণ পেস সহায়ক কিছু ছিল না। ছিল কেবল বাড়তি বাউন্স, যা নিউজিল্যান্ডে একটু থাকেই। কিন্তু কিউইদের নতুন বলের দুই বোলারের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পাশাপাশি নিজেদের বাজে ব্যাটিংয়ে শুরু থেকেই ভুগতে থাকে শ্রীলঙ্কা। ম্যাচের তৃতীয় ওভারে হেনরির বলে বাজে শটে স্লিপে ক্যাচ দেন নুয়ানিন্দু ফার্নান্দো (২)। হেনরির পরের ওভারে বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন কুসাল মেন্ডিস। সিরিজে দুই ম্যাচ ব্যাট করে মোট ২২ বল খেলে তার রান শূন্য।

শূন্যতে কাটা পড়েন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসও। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানও ক্যাচ দেন স্লিপে, শিকারি এবার শিপলি। অষ্টম ওভারে ১৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। ওপেনিংয়ে নেমে তখনও পর্যন্ত এক প্রান্তে একরকম দর্শক হয়ে ছিলেন পাথুম নিসানকা। দশম ওভারে শিপলিকে পুল করে ছক্কায় নিজের অস্তিত্ব জানান দেন তিনি। চারিথ আসালঙ্কার সঙ্গে জুটি গড়ার আভাসও দেন। কিন্তু সেই জুটি থামে ৩১ রানেই। মিচেলকে ফ্লিক করে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন আসালাঙ্কা। পরের জুটিগুলোরও সেই একই চিত্র, ২১, ৩০, ২৮। একাদশে ফেরা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা আলগা শটে মিচেলকে উইকেট দেন ১৩ রান করে।

নিসানকা স্রোতের বিপরীতে দারুণ খেলে ফিফটি করেন ৫৮ বলে। তবে পরের ওভারেই তার রান আউট দলকে বিপদে ফেলে দেয় আরও। মূল দায়টা ছিল সেখানে দাসুন শানাকার। অধিনায়কের জন্য বলা যায় নিজের উইকেট ছেড়ে দিয়ে আসেন নিসানকা। তার ইনিংস শেষ হয় ৬৪ বলে ৫৭ রানে। শানাকা ১ রানেই মিচেলকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়ে দারুণ কয়েকটি শট খেলেন। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনিও। দুটি করে চার-ছক্কায় ৩১ রান করে লঙ্কান দলপতি বিদায় নেন শিপলিকে স্লগ করতে গিয়ে। এরপর চামিকা করুনারত্নের ২৪ রানে কোনোরকমে দেড়শ ছাড়ায় লঙ্কানরা।

ছোট সেই পুঁজি নিয়েই লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেয় লঙ্কান পেসাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই দুই কিউই ওপেনার চ্যাড বাওয়েস ও টম ব্লান্ডেলকে ফেরান লাহিরু কুমারা। একটু পর কাসুন রাজিথার বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মিচেল। ইয়াং অবশ্য শুরু থেকেই ছিলেন সাবলিল। তবে তার সঙ্গে ৩৮ রানের জুটির পর আউট হয়ে যান অধিনায়ক টম ল্যাথাম। ৫৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচে নাটকীয়তা জাগিয়ে তোলে শ্রীলঙ্কা।

কিন্তু ইয়াংকে ফেরানোর কোনো পথ তারা খুঁজে পায়নি। তার সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে তোলেন হেনরি নিকেলসও। একটু একটু করে লঙ্কানদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন তারা। কোনো সুযোগ তারা দেননি, খুব একটা বেগ তাদের পেতে হয়নি। ১০০ রানের ম্যাচ জেতানো অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তারা ১০৮ বলে। ১১ চারে ৮৬ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন ইয়াং। ম্যাচের সেরাও তিনিই। ৫ চারে ৫৫ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থেকে যান নিকোলস। দুই দল এখন মুখোমুখি হবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে, অকল্যান্ডে যা শুরু রবিবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা : ৪১.৩ ওভারে ১৫৭ (নিসানকা ৫৭, ফার্নান্দো ২, কুসাল ০, ম্যাথিউস ০, আসালানকা ৯, ধনাঞ্জয়া ১৩, শানাকা ৩১, করুনারত্নে ২৪, হাসারাঙ্গা ০, রাজিথা ৯, কুমারা ০*; হেনরি ১০-২-১৪-৩, শিপলি ৮.৩-২-৩২-৩, টিকনার ৮-২-৩৫-০ মিচেল ৭-১-৩২-৩, সোধি ৮-০-৪০-০)।

নিউজিল্যান্ড: ৩২.৫ ওভারে ১৫৯/৪ (বাওয়েস ১, ব্লান্ডেল ৪, ইয়াং ৮৬*, মিচেল ৬, ল্যাথাম ৮, নিকোলস ৪৪*; রাজিথা ৯-০-৪৪-১, কুমারা ৭.৪-০-৩৯-২, করুনারত্নে ৪.৫-০-২৬-০, শানাকা ৭.২-১-২৫-১ হাসারাঙ্গা ৪-০-২২-০)।

ফল: নিউজিল্যন্ড ইনিংস ৬ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ২-০তে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: উইল ইয়াং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here