বোয়ালমারী(ফরিদপুর)প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে সাবেক স্ত্রী ও তার ভাগ্নেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এক বৃদ্ধ ও তার পরিবার বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মথ্যা মামলা ও দলবেঁধে হামলা চালিয়ে বৃদ্ধের ছেলেকে মারাত্মক ভাবে আহত করেছে প্রতিপক্ষ। সেই সাথে পরিবারের সবাইকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছে তারা। সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের মহিশালা গ্রামে। গ্রামটির আব্দুস সামাদ শেখের ছেলে বৃদ্ধ মোঃ ইলিয়াস শেখের সাথে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে গ্রামটির মৃত মইন শেখের ছেলে মোঃ কোবাদ শেখ, মোঃ উবাই শেখ ও তাদের দলের মোঃ ছত্তর শেখ, মোঃ নজরুল মোল্যা এবং মোঃ শুকুর শেখের সাথে।
অভিযোগকারী মো. ইলিয়াস শেখ লিখিত অভিযোগে জানান- আমার প্রতিপক্ষগণ আমার সাবেক স্ত্রী আঙ্গুরী বেগমের নিকট-আত্মীয় এবং কোবাদ শেখ ও উবাই শেখ তার আপন ভাগ্নে । তারা আমার সাবেক স্ত্রীকে নানা ধরণের প্রলোভন দেখিয়ে আমার কিছু জমি দখলের চেষ্টা করে । এ নিয়ে আমার সাবেক স্ত্রীর সাথে সাংসারিক ঝামেলা সৃষ্টি হয়। নানাভাবে চেষ্টা করেও তার সাথে বনিবনা হচ্ছিলো না।
সে সব সময় তার ভাগ্নেদের পক্ষ নিয়ে আমি ও আমার পরিবারের ক্ষতির চেষ্টা চালায়। সে ঘরে রাখা ফসলসহ সংসারের নানা জিনিশ গোপনে আমার প্রতিপক্ষকে দিতে থাকে। গত বছর আমি একটি জমি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে ফসল বিক্রি করে ও একটি বন্ধক রাখা জমির টাকা ফেরত এনে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জমা করি। জমা টাকা আমার সাবেক স্ত্রীর নিকট দিয়ে সাবধানে তুলে রাখতে বলি। আমার স্ত্রী তার ভাগ্নেদের সহযোগিতায় রাতের আধঁরে সেই টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। খোঁজাখুঁজির পর জানা যায়, টাকা নিয়ে সে সাতৈর ইউনিয়নের প্রেমতারা গ্রামে আমার সাবেক শ্বশুর মৃত জয়নুদ্দিন মোল্যার বাড়িতে তার ভাইদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে।
এ বিষয়ে নালিশ জানালে গত ২০ অগাস্ট ২০২২-এ সাতৈর ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে চেয়ারম্যান রাফিউল আলম মিন্টুর সভাপতিত্বে, ৪জন ইউপি সদস্যসহ এলাকার একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে একটি শালিস বৈঠক হয়। শালিসে আমার সাবেক স্ত্রী আঙ্গুরী বেগম ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে। শালিস বৈঠকে আমার সাবেক স্ত্রীকে ২৮ অগাস্টের মধ্যে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আমাকে ফেরত দিতে রায় প্রদান করে শালিসি বৈঠক। এবং অতীতের কলহবিবাদ ভুলে সংসার করার কথা বলে।
আমার প্রতিপক্ষ সাবেক স্ত্রীর ভাই ভাগ্নেরা টাকা ফেরত না দিয়ে তাকে দিয়ে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাদের পরামর্শে সে আমার বিরুদ্ধে যৌতুক ও তার গর্ভজাত আমার ছেলে মোঃ আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে আদালতে ২টি মামলা করে। অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় মামলা খারিজ করে দেয় আদালত । এমত অবস্থায় নিজের নিরাপত্তা, সংসারের শান্তি ফিরিয়ে আনতে ইসলামিক শরিয়ত মোতাবেক আমি আমার সাবেক স্ত্রী আঙ্গুরী বেগমকে তালাক দেই।
তালাক পরবর্তীতে সে আবারও আলাদতের আশ্রয় নিলে আলাদত তালাক বহল রেখে তাকে দেনমোহরের ১৫ হাজার টাকার বদলে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয় ও আমার সাবেক স্ত্রীর আবেদনের প্রেক্ষিতে তার গর্ভজাত আমার ছেলে মোঃ আনোয়ার হোসেনকে তার মা’য়ের ভরণ পোষণের নির্দেশে দেন আদালত। এ রায়ের পর আমার সাবেক স্ত্রী আঙ্গুরী বেগমকে তার ভাগ্নেরা কু-পরামর্শ দিয়ে আমার বাড়িতে পাঠায়। কিন্তু আমি আমার বাড়িতে তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে গ্রহণ করতে অস্বীকার জানালে আমার প্রতিপক্ষের পরামর্শে সে জোর পূর্বক আমার বাড়িতে অবস্থান করে। এ সময় আমি বাড়িতে তালা দিয়ে আমার এক আত্মীয় বাড়িতে অবস্থান করি।
আমার প্রতিপক্ষগণ এ সুযোগে গভীর রাতে বোয়ালমারীতে থেকে ১জন সাংবাদিককে এনে আমার ছেলের উপর আদালতের রায় অবমাননার নিউজ করার ভয় দেখিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। তখন আমার ছেলে কয়কজন প্রতিবেশিকে ডেকে আনলে কথিত ওই সাংবাদিক বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য একটি শালিস করার কথা বলে তাকে এক প্রতিবেশির জিম্মায় রেখে যায়। এর দু দিন পর গত ২৮ এপ্রিল আমার বাড়িতে একটি শালিস করে ওই সাংবাদিক। আমার দলের সবাই হাজির হলেও প্রতিপক্ষের কেউ না এলে সে নিজেকে তাদের প্রতিনিধি জানিয়ে শালিস করে।
এতে আঙ্গুরী বেগমকে তার বাবার বাড়ীতে থাকা ও তার সন্তানকে মায়ের যাবতীয় খরচ বহনসহ ভবিষ্যতে আলাদা কোথাও তাকে রাখার ব্যবস্থা করার কথা বলে। এ রায়ের প্রেক্ষিতে আমার ছেলে আনোয়ার হোসেন তার মা’কে নিয়ে মামা বাড়িতে রাখতে যায়। এ সময় আমার সাবেক স্ত্রীর ভাগ্নেগণ পথ থেকে তাকে জোর পূর্বক ফের আমার বাড়িতে ফেরত পাঠায়। আমার ছেলে আনোয়ার হোসেন এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তারা একজোট হয়ে আমার বাড়ির উপর এসে আমার ছেলে আনোয়ার হোসেনকে রড, বাঁশের লাঠি, লোহার হাতুরি দিয়ে মারাত্মকভাবে পিটিয়ে আহত করে। হামলার সময় আমার সাবেক স্ত্রী ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করে তার ভাগ্নেরা । আমার প্রতিবেশিগণ শোর-চিৎকার শুনে এগিয়ে এসে আমার ছেলেকে উদ্ধার করে প্রথমে বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার আবনতি হলে চিকিৎসগণ তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে। বর্তমান সে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ইতোমধ্যে আমার প্রতিপক্ষের লোকজন আমার সাবেক স্ত্রীকে দিয়ে তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর মিথ্যা নাটক সাজিয়ে বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করে। এবং তারা অর্থের বিনিময়ে ফরিদপুরের একটি দৈনিকে কর্মরত কথিত এক সাংবাদিককে দিয়ে মিথ্যা ভিত্তিহীন গল্প সাজিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও এবং একটি মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে মূল ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। একই সাথে এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিলে আমিও আমার পরিবারের সবাইকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে তারা। বর্তমানে আমি, আমার মেয়ে ও ছেলের পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি।
এ ব্যপারে আঙ্গুরী বেগমের ভাগ্নে মো. কোবাদ শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ০১৯১৫৮৮৯৫৮৯ বাংলালিংক নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তা বন্ধ থাকায় তার বক্ত্যব নে
এ ব্যপারে আঙ্গুরী বেগমের ভাগ্নে মো. কোবাদ শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ০১৯১৫৮৮৯৫৮৯ বাংলালিংক নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তা বন্ধ থাকায় তার বক্ত্যব নেওয়া সম্ভাব হয় নাই।
এ বিষয়ে সাতৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাফিউল আলম মিন্টু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান- আমি মিমাংশার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলাম মূলত মহিলার ভাই ও তার ভাগ্নেরা নিজেদের স্বার্থে সংসারটিতে ভাঙ্গন সৃষ্টি করেছে। শুনেছি ছেলেটার উপর হামলা হয়েছে এটা দুঃখজনক।