নওগাঁ জেলায় এবার চলতি মাসের ২২ তারিখ থেকে আম সংগ্রহ শুরু হবে। ওইদিন থেকে কেবল গুটি জাতের আম সংগ্রহ করা যাবে। তবে সুস্বাদু আম খেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।
রবিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক বৈঠকে বিভিন্ন জাতের আম সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এই বৈঠকে আম চাষি, ব্যবসায়ী, কৃষি কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী, এই মৌসুমে ২২ মে গুটি জাতের আম, ২২ মে থেকে গোপালভোগ, ২ জুন ক্ষীরশাপাতি/হিমসাগর, ৭ জুন নাক ফজলি, ১০ জুন ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা, ২০ জুন ফজলি, ২২ জুন আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, বারি আম-৪, গৌড়মতি ও কাটিনা আম সংগ্রহ করা যাবে।
চলতি বছর নওগাঁয় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ দশমিক ৬ মেট্রিক টন হিসেবে জেলায় আম সংগ্রহের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্য হতে পারে ধারণা করছে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ।
জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে আয়োজিত ওই সভায় অন্যান্যদের মধ্যে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন জলিল ও কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে কোনোভাবেই অপরিপক্ক আম সংগ্রহ কিংবা বাজাওে তোলা যাবে না। তবে সময়ের আগে আবহাওয়া জনিত কারণে আম পরিপক্ক হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আম চাষিরা তারিখ পুনঃনির্ধারণ করে সময়ের আগে আম সংগ্রহ করতে পারবেন। আম পাকানো ও সংরক্ষণ বা বাজারজাতে কোনো কেমিক্যাল মেশানো যাবে না। আমে ভেজাল ঠেকাতে পরিবহনের আগে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের বাজার সাপাহার উপজেলা সদর বাজার, পোরশার নোচনাহার, সারাইগাছীসহ বিভিন্ন বাজারে বিশেষ নজরদারি রাখবে প্রশাসন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তারিখ অনুযায়ী আম সংগ্রহ করতে জেলাজুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। মূলত ভোক্তাদের পরিপক্ব ও ক্ষতিকারক কেমিক্যাল উপাদানমুক্ত আম খাওয়াতে জাতভেদে আম সংগ্রহের সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ভোক্তাদের ভেজালমুক্ত আম খাওয়ানো নিশ্চিতের পাশাপাশি বিদেশে আম রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি কৃষি বিভাগ তৎপর রয়েছে।
জেলা থেকে গত বছর ৭৮ মেট্রিক টন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এ বছর ৩০০ থেকে ৪০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য বেশ কিছু আম চাষিকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী উত্তম কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করে আম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম আজাদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গতবারের চেয়ে এবার নওগাঁর বাগানগুলোতে আমের ফলন ভালো হয়েছে। বাগানের গাছগুলোতে গতবারের চেয়ে আম ধরেছে বেশি। তবে গাছে আম বেশি ধরার কারণে এবং এপ্রিল মাসে দুই-তিন সপ্তাহ জুড়ে তীব্র তাপদাহের কারণে আমের আকার এবার কিছুটা ছোট হতে পারে।
আমের আকার ছোট হলেও গাছে আম বেশি ধরায় আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কম হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আরেক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, অনলাইনে যে সব তরুণ উদ্যোক্তা আম বাজারজাতকরণের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাঁদেরকে উৎসাহিত করতে প্রশাসন কাজ করছে। অনলাইনে অর্ডার পাওয়া আম কুরিয়ারে পাঠাতে যাতে কুরিয়ার কোম্পানিগুলো যৌক্তিক ভাড়া নেয় তা নিশ্চিত করার জন্য কুরিয়ার কোম্পানি সমূহের প্রতিনিধিদের সঙ্গে চলতি সপ্তাহে বৈঠক করা হবে।