টানা ২ ঘণ্টার বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চল তালা, পাটকেলঘাটা, কলারোয়া ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বেশ কিছু এলাকায়। ফলে কষ্টে ফলানো স্বপ্নের ফসল ধানের উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা সেই চিন্তায় দিশেহারা কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির তথ্য মতে সাতক্ষীরা জেলায় এবছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ৩ মে’র ২ ঘণ্টা ঝড়ো বৃষ্টিতে পাকা ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়া ও কর্তনকৃত ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা একটু ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। এতে করে ক্ষেত থেকে ফসল ঘরে তুলতে কৃষকের মজুরি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা ক্ষতির মধ্যে পড়লেও ফলন ভালো হওয়ায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি বৃষ্টি ও কাল বৈশাখি ঝড়ে কি পরিমাণ বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক তথ্য তার কাছে নেই। তবে বৃষ্টির কারণে নিম্নাঞ্চলে জমে থাকা পানিতে কিছুটা বোর ধানের ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ৭৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোর ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।
তবে সরেজমিনে গিয়ে ও খোঁজখবর নিয়ে জানাগেছে সম্প্রতি গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জেলার তালা, পাটকেলঘাটা, কুমিরা, মির্জাপুর, ইসলামকাটি, জাতপুর, মদনপুর, তেতুঁলিয়া, মাগুরা, খলিষখালি, যুগিপুকুরিয়া, মিঠাবাড়ী, শার্শা, নগরঘাটা, কলারোয়া ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তুজুলপুর, আখড়াখোলাসহ বেশ কিছু নিম্ন অঞ্চলে পাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ স্থানে ক্ষেতে কেটে রাখা ৫০ শতাংশ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাকি ৫০ শতাংশ ধান কৃষকের ঘরে উঠেছে।
তালা উপজেলার বারাত গ্রামের কৃষক শহিদুুল ইসলাম জানান, ২ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধানের চাষ করেছেন। শ্রমিক না পেয়ে সব ধান বাড়িতে নিতে পারেননি। ৩ মার্চ বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টির কারণে জমিতে কেটে রাখা ধান পানিতে তলিয়ে যায়। এখন শ্রমিকের বেশি মুজুুরি দিয়ে ঘরে ধান তুলতে হচ্ছে। বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিকের মূল্য বেশি থাকায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়েছে।
ইসলামকাটি গ্রামের কৃষক পান্না ও তালার গোলদার শাহীন জানান, সম্প্রতি ঝড়ো বৃষ্টিতে তালার বিস্তির্ণ এলাকার পাকা ধান জমিতে লুুটিয়ে পড়েছে। কেউ কেউ ধান কেটে স্তুপ করে রেখেছে। আবার কেটে রাখা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। সে সব ধান এখন শ্রমিকের দ্বিগুুন মুজুুরী দিয়ে ক্ষেত থেকে তুলে তা রৌদ্রে শুকাতে হচ্ছে। অনেকে শ্রমিকের অভাবে সময় মত জমির ধান কাটতে পারেনি। ফলে ঝড়-বৃষ্টিতে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের তুুলনাায় এবছর ধানের বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিকের মুজুরী দ্বিগুণ হওয়ায় তাদের লসের মুখ দেখতে হচ্ছে।