৩ বন্ধুর লাশ উদ্ধার: রোহিঙ্গা নারীর খোঁজে পুলিশ

0
71

টেকনাফে অপহৃত হওয়ার ২৬ দিন পর তিন বন্ধুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় উপজেলার নোয়াখালী পাড়ায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা নারী কোহিনুর আক্তারকে খুঁজছে পুলিশ। কোহিনুরের দাওয়াতেই গত ২৮ এপ্রিল কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়ারছড়া থেকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুর বিল যাওয়ার সময় অপহরণের শিকার হন তিন বন্ধু– জমির হোসেন রুবেল, শেখ ইমরান সরকার ও মোহাম্মদ ইউছুপ। বুধবার রাতে টেকনাফের দমদমিয়া এলাকার গহিন পাহাড় থেকে তিন বন্ধুর মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশ ও লেঙ্গুর বিলের স্থানীয়রা জানান, অপহরণের ঘটনার পর থেকে কোহিনুর এবং তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক। কোহিনুরের খোঁজ পাওয়া গেলেই এ অপহরণের কারণ এবং হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত তা বেরিয়ে আসবে। নিহতদের মধ্যে অন্যতম কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ আলমের ছেলে রুবেল।

তাঁর ভাগ্নি রূপা আক্তার অভিযোগ করেন, রুবেল মামা এর আগে তিনটি বিয়ে করেছিলেন, তবে সব বিয়ে ভেঙে যায়। তাই বিয়ের জন্য তিনি নতুন পাত্রী খুঁজছিলেন। এর মধ্যে মামা কোহিনুর নামে এক রোহিঙ্গা নারীর ফাঁদে পড়েন। ওই নারীই কৌশলে মামা ও তাঁর বন্ধুদের টেকনাফ নিয়ে অপহরণকারীদের হাতে তুলে দেয়।

গত ২৮ এপ্রিল নিখোঁজের পর অপহরণকারীরা ফোন করে প্রথমে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে এ দাবি ৫ লাখ টাকায় এসে ঠেকে। বিষয়টি তখন পুলিশকে জানানো হয়েছিল। আমরা বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়েছি, কোহিনুর কক্সবাজার শহরেই থাকত। ওই নারী নিজে এবং অন্য রোহিঙ্গা মেয়েদের কক্সবাজার শহরে এনে পতিতাবৃত্তি করাত। রুবেলের বোন মিনু আরা বেগম বলেন, আমার ভাই নিখোঁজের পরপরই পুলিশকে জানাই এবং ১০ মে টেকনাফ থানায় মামলা করি। 

নিহত ইমরানের মা হামিদা বেগম জানান, গত ২৯ এপ্রিল অপহরণকারীরা ইমরানের মোবাইল ফোন থেকে কল করে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল। আমরা ধার করে ইমরান ও রুবেলের নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ ১ হাজার টাকাও দিয়েছিলাম। কিন্তু বাকি টাকা দিতে না পারায় তাদের খুন করেছে অপহরণকারীরা। ছেলেকে অপহরণের কথা শোনার পর থেকে টেকনাফ থানায় আমার স্বামী শেখ ইব্রাহিম অন্তত সাতবার গিয়েছে। কিন্তু কোনোবারই পুলিশ জিডি বা মামলা নেয়নি। কক্সবাজার সদর থানা কর্তৃপক্ষও জিডি বা মামলা রেকর্ড করেনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও টেকনাফ থানার এসআই মঞ্জুর জানান, তিন বন্ধু অপহরণের ঘটনায় রুবেলের বোন মামলা করার পর শফি আলম ও ইয়াসির আরাফাত নামে দুই রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এর মধ্যেই গত বুধবার তিন বন্ধুর লাশ উদ্ধার হয়। নিহত রুবেলের এক স্ত্রীর সঙ্গে রোহিঙ্গা নারী কোহিনুর কিংবা অপহরণকারীদের যোগাযোগ রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রেপ্তার শফি ও ইয়াসিরকে আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আগামী ২৮ মে এ আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য্য রয়েছে।

মামলা গ্রহণে গড়িমসির বিষয়টি অস্বীকার করে টেকনাফ থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, স্বজনদের অভিযোগের পরপরই অপহৃত তিনজনকে উদ্ধারে পুলিশ কাজ শুরু করে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই স্বজনদের অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।  

এদিকে তিন বন্ধুর লাশ উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম।

তিনি জানান, তিন বন্ধু অপহৃত হওয়ার পর তাঁদের পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বিষয়টি র‌্যাবকে জানালে আমরা অভিযানে নামি। র‌্যাব তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সে সময় টেকনাফের হাবিবছড়া গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ছৈয়দ হোসেন ওরফে সোনালী ডাকাত ও এমরুল করিমকে আটক করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী টেকনাফ দমদমিয়া এলাকার পাহাড় থেকে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করা হয়। মরদেহগুলো অর্ধগলিত ছিল। নিশ্চিহ্ন করতে ডাকাত দল মরদেহগুলো আগুন দিয়ে পোড়ানোর চেষ্টা করেছিল।

তিনি জানান, মরদেহগুলো যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে সেখানে মানুষের যাতায়াত নেই। ডাকাতরা বারবার ফোনের সিম পরিবর্তনের কারণে তাদের শনাক্ত করতে একটু দেরি হয়েছে। আটক হোসেন ও এমরুল প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে, তারা ডাকাতি ও অপহরণে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। বিত্তশালীদের টার্গেট করে অপহরণ করত তারা। যারা টাকা দিতে ব্যর্থ হয় তাদের খুন করে মাটির মধ্যে পুঁতে রাখা হতো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here