আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম

0
324

মাদক সেবন থেকে মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িয়ে যান রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. সুমন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে শেষে বনে যান সোর্স। কথিত এই সোর্সের হাতেই এখন জিম্মি নগরীর বিভিন্ন এলাকার লোকজন। এর বড় অংশ মাদক কারবারী। বাদ যাচ্ছেননা সাধারণ জনগণ।

অনুসন্ধান বলছে, সুমনের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। মাদক কারবারে যুক্ত হয়ে থিতু হয়েছেন রাজশাহী নগরীতে। দীর্ঘদিন ধরে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ এবং র‌্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করছেন তিনি।

বর্তমানে সুমন নগর পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মীর মহসিন মাসুদ রানার সোর্স হিসেবে কাজ করছেন। অভিযোগ রয়েছে, কখনো কখনো নিজেকে এসির দেহরক্ষি পরিচয়ও দেন সুমন। এসি মীর মহসিন মাসুদ রানার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিসহ পুরো নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সুমন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসির নাম ভাঙিয়ে চিহ্নিত মাদক ও জুয়ার কারবারীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছেন সুমন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই সিটিং মামলায় চালান। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ আদায় করছেন নিয়মিত। আবার ধরিয়ে দিয়ে ছাড়ানোর নামে প্ররতারনা করেও অর্থ আদায় করছেন।

নগর পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, নগরীর সোনাইকান্দি এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আমীর চাঁন ও তার ভাই লালচাঁনের ব্যবসায়ীক পার্টনার সুমন। সুমনের সহায়তায় এলাকায় নির্বিঘ্নে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসায়ী এই সহোদর। তবে কথা না শুনলেই বাধে বিপত্তি। মাদক মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়েও মোটা অর্থ আদায় করেন সুমন।

চাঁদা না দেয়ায় সম্প্রতি সুমন সোনাইকান্দি এলাকার মাদক ব্যবসায়ী মামুনকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। তবে দেড় লাখ টাকা দিয়ে শেষ পর্যন্ত সুমনের জাল থেকে বেরিয়ে আসেন নগরীর চারখুঁটারমোড় এলাকার মাদক ব্যবসায়ী মো. সুমন। মাস ছয়েকের মধ্যে অর্ধশত মাদক কারবারীকে এই সুমন ফাঁদে ফেলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এনিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চাননি।

নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, প্রথমে সুমন তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। রাজি না হলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। তাতেও কাজ না হলে সাজানো মামলায় ধরিয়ে দেন। ছাড়িয়ে আনার নাম করে অর্থ দাবি করেন। অর্থ পেলেই ছাড়িয়ে আনেন। জানা যায়, সুমনকে ম্যানেজ করে কারবার চালিয়ে যান নগরীর ডাঁসমারি মিজানের মোড়ের শাহীন ও কামরুল, চরখিদিরপুরের ইমরান আলী ও শহিদুল ইসলাম, জাহাজঘাট এলাকার বকুল, মহব্বতের ঘাটের সজিব, চরশ্যামপুরের মনিরুলসহ আরো অনেকেই।

নগরীর বোয়ালিয়া, রাজপাড়া, মতিহার, শাহমখদুম, পবা, এয়ারপোর্ট, কাশিয়াডাঙ্গা, কাটাখালি, বেলপুকুর, দামকুড়া ও কর্ণহার থানার মাদক ও জুয়া কারবারীদের মাথায় কাঠাঁল ভাঙছেন সুমন। তবে গ্রেপ্তারের ভয়ে এনিয়ে সুমনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাননা কেউই। অভিযোগ বিষয়ে জানতে সুমনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন। সোর্সের এমন কাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মীর মহসিন মাসুদ রানা বলেন, একসময় সুমন তাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতেন। কিন্তু মাস ছয়েক হলো তার সাথে যোগাযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।

তবে নগর পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এমন অভিযোগ তারা খতিয়ে দেখবেন। এ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও মিলেছে নগর পুলিশের তরফে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here