ব্যাংকঋণে সুদের হার ৬ শতাংশের বেশি হলে বড় ধরনের মন্দা আঘাত হানতে পারে ব্রিটেনে। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে বেকারত্বও। পরিস্থিতি ঝুঁকপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য।
সম্প্রতি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটির অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।সাধারণ মানুষের জীবন ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। বেড়ে গেছে বাসা ভাড়া। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোয়ও অর্থনৈতিক অপ্রতুলতা স্পষ্ট। বিশেষ করে ছোট ছোট যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, তারা হিমশিম খাচ্ছে টিকে থাকার প্রচেষ্টায়। মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় ব্যাংকঋণে সুদের হার বাড়ার ফলে প্রভাবিত হয়েছে জনজীবন। যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত সংকট মোকাবেলা করেছে মন্দায় না পড়েই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ভাষায়, কিছুটা ফিরেছে অর্থনৈতিক গতি। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, হয়তো ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (বিওই) হাতে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সুদের হার বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। হয়তো শিগগিরই আরও এক দফা বেড়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশে দাঁড়াতে পারে সুদের হার। এমনকি ৬ শতাংশেও দাঁড়াতে পারে। আর যদি সেটা হয়, তাহলে সুদের হার গত ২২ বছরে সর্বোচ্চ অবস্থানে উত্তীর্ণ হবে। মর্টগেজের সঙ্গে বাড়তি খরচ হিসেবে যুক্ত হবে ২৫০ পাউন্ড। আবাসন প্রতিষ্ঠান বিল্টপ্লেসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিয়াল হাডসন দাবি করেছেন, বাসা মালিকরা আয়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ কেবল মর্টগেজ খরচে ব্যয় করবে, যা ২০২০ সালেও ছিল ১৭ শতাংশ। যাদের নতুন মর্টগেজ করতে হবে, তাদের জন্য জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। নেটওয়েলথের প্রধান অর্থনীতিবিদ জেরার্ড লিয়নস দাবি করেছেন, যদি ব্যাংক সুদের হার আরও বাড়ায়, তাহলে বাজারে তার প্রভাব দৃশ্যমান হবে মন্দার মধ্য দিয়ে।
সুদের হার বাড়লে বেড়ে যাবে বেকারত্ব ও কর্মী ছাঁটাই। কোম্পানিগুলো অর্থনৈতিকভাবে হিমশিম খাবে। ব্যয় সংকোচনের জন্য বেছে নেবে ছাঁটাইয়ের রাস্তা। ভোক্তাব্যয় সংকুচিত হওয়া প্রায় নিশ্চিত।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সুদহার নির্ধারণী সভায় হাজির থাকা মেগান গ্রিন বলেছেন, “সুদের হার তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রভাব ফেলে ভোক্তার ওপর, যা মন্দাকে ত্বরান্বিত করতে পারে।”
আইএমএফের সাবেক অর্থনীতি প্রধান রঘুরাম রাজন জানান, এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত গতিতে বাড়বে বেকার সমস্যা। বেকার সমস্যা প্রভাব ফেলবে মর্টগেজ ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও। এ পরিস্থিতি ব্রিটেন এড়িয়ে যেতে পারত। যদি মূল্যস্ফীতিকে নাগালের মধ্যে রাখার নিশ্চয়তা পাওয়া যেত। বাজারে মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা মানেই বিনিয়োগকারীদের পিছু হটা। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের জন্য পরিস্থিতি বেশ প্রতিকূলতাপূর্ণ। বিশেষ করে আগামী বছর নির্বাচন হওয়ার কথা।
লিবারেল ডেমোক্রেটরা ৩০০ কোটি পাউন্ড মর্টগেজ সহযোগিতার দাবি তুলেছেন, যাতে করে সংকটে পড়া ব্যক্তিরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন। কিন্তু প্রতি শতাংশীয় পয়েন্ট হার বাড়ার অর্থই সরকারের পরিষেবা খাতে দেনা বাড়া। ঋণ খরচ বেশি হয়ে গেলে গৃহস্থালি খরচ ও ভোক্তাব্যয় সংকুচিত হয়। আর ভোক্তাব্যয় কমতে থাকলে কমতে থাকে পণ্যের দাম। কিন্তু প্রক্রিয়াটা খুবই ধীর। যদি কোনোভাবে খরচ ২০০৮ সালের রূপ লাভ করে, তাহলে অর্থনৈতিক মন্দা হবে সে সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি শক্তিশালী। অনেক ব্যক্তিকে বেকায়দায় পড়তে হবে তার জন্য। মানুষ চাকরি হারাতে থাকলে ভোক্তা চাহিদার সূচক নেমে আসবে তলানিতে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের ১২ শতাংশ কোম্পানিই প্রায় জম্বি হয়ে গেছে। অর্থাৎ কার্যত তারা আয় থেকে সুদ পরিশোধ করতে পারছে না। সুদের হার ৬ শতাংশে উন্নীত হলে অনুপাতটা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অনেক প্রতিষ্ঠান তখন টিকে থাকতে পারবে না। সুদের হার ও মূল্যস্ফীতি আগামীতে আরও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে থাকবে। বড় ব্যবসাগুলো সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সূত্র: রয়টার্স