লক্ষ্মীপুরে গ্রামীণে মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নতুন মাত্রা

0
95

সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ও জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন। অসহায়, দুস্থ, প্রতিবন্ধীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সেবা দিতে প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জে যাচ্ছে ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। এতে সাধারণ মানুষ সহজে সেবা নিতে পারবে। কমবে দুর্ভোগসহ নানা হয়রানি। 

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন “আমার গ্রাম, আমার শহর” বাস্তবায়নের লক্ষে লক্ষ্মীপুরে গ্রামীণ পর্যায়ে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চালু করা হয় ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামের এ্যাম্বুলেন্স সেবা। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে বর্তমান জেলা প্রশাসক ১টি এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে জেলার রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নে এ কার্যক্রম শুরু করে। একই সাথে এর সেবা প্রাপ্তির স্বপ্নযাত্রা নামের একটি এ্যাপসও উদ্বোধন করা হয়।লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে গ্রামীণ পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে শুরু হওয়া কার্যক্রমটি এখন পরিচালিত হচ্ছে ১৭টি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে। এগুলো ক্রয় বাবদ খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এই অ্যাম্বুলেন্সগুলো জেলার ৫৮টি ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এ যাবৎ ১৫৯৬ জন রোগী পরিবহন হয়েছে স্বপ্নযাত্রা এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তহবিল থেকে কেনা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সগুলো। ২৪ ঘণ্টায় সদরসহ জেলার ৫টি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছে ‘স্বপ্নযাত্রা’। সহজেই মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে এই সার্ভিস ব্যবহারও করতে পারছেন। সে জন্য গুগল প্লে স্টোরে দেয়া হয়েছে স্বপ্নযাত্রা নামের একটি অ্যাপ, যা ডাউনলোড করে সেবার বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, স্ম্যাট ফোনের প্লেষ্টোর থেকে এ্যাপস ডাউনলোড করে এ সেবার বিস্তারিত তথ্য জানা ও সেবা নিচ্ছে মানুষ। প্রতিটি এ্যাম্বুলেন্সের জন্য একজন করে চালক নিয়োগ করা হয়েছে। এ্যাম্বুলেন্সের চালক ও তেল খরচ রোগী পরিবহনের আয় থেকে মেটানো হয়। এ্যাম্বুলেন্সগুলোর তত্ত্বাবধান করেন উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ। এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে নন এসি প্রতি কিলোমিটারের জন্য ১৮ টাকা ও এসি ২০ টাকা হারে ভাড়া দিতে হয়। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা, অগ্নিকান্ড, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনায় আহত বা মৃতদেহ, প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী নারী এবং প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য ভাড়া দিতে হয় নন এসি প্রতি কিলোমিটারের জন্য ১৫ টাকা ও এসি ১৬ টাকা হারে। কম খরচে হাতের কাছে এমন সেবা পেয়ে বেজায় খুশি সাধারণ মানুষ। ২৪ ঘন্টা মানুষের সেবা দিতে তৎপর রয়েছে চালক ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিরাও।

স্থানীয় প্রশাসনের এ উদ্যোগ নিয়ে সচেতন নাগরিক বলছেন, এ ‘স্বপ্নযাত্রা’ এ্যাম্বুলেন্স সেবার মাধ্যমে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষগুলো স্বাস্থ্যসেবা নিতে সহজ হচ্ছে। তারা মনে করছেন, বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয় ও গ্রামীন হাট-বাজারে এর প্রচার বাড়ালে মানুষের সেবায়, মানুষের পাশেই থাকবে এ এ্যাম্বুলেন্সগুলো। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে দেশে ছড়িয়ে দেয়ার দাবি তাদের। 

রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের পশ্চিম চরসীতা গ্রামের রহিমা জানান, তারই বোন আসমা আক্তারের বুকে ব্যথা অনুভব হলে তার ছেলে মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামের অ্যাপের মাধ্যমে এ্যাম্বুলেন্সকে কল করে। মিনিট দশেকের মধ্যে ঘরের সামনে অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির। আসমাকে নিয়ে যাওয়া হলো নোয়াখালী জেনারেল হাসপালাতে। বর্তমানে তিনি সুস্থ্য আছেন। রহিমা আরও জানালেন, ‘স্বপ্নযাত্রা’ এ্যাম্বুলেন্সের এমন সেবা না পেলে হইতো তার বোনকে বাঁচানো যেতো না। একই গ্রামের রানী বেগম জানান, তার মেয়ে ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন। স্বপ্নযাত্রা এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া বেঁচে যান তার মেয়ে। এজন্য লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কেননা প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন আর জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে গ্রামীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বপ্নযাত্রা নামে এ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এ্যাপস কিংবা কল করলেই পৌঁছে যাচ্ছে ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামের এ্যাম্বুলেন্স। জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগকে প্রশংসনীয় দাবি করেন স্থানীয়রা। কম খরচে হাতের নাগালে এমন সেবা পেয়ে বেজায় খুশি সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি, স্বপ্নযাত্রা এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস যেন তাদের মাঝে সব সময় বাস্তব হয়ে থাকে। 
রামগতি উপজেলার চর আব্দুল্ল্যাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: কামাল উদ্দিন বলেন, চর আব্দুল্ল্যাহ ইউনিয়ন থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ট্রলারে করে একজন রোগী নিয়ে আসতে সময় লাগতো ২ থেকে আড়াই ঘন্টা। স্বপ্নযাত্রা ওয়াটার এ্যাম্বুলেন্সে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট। একদিকে ভাড়াও যেমন সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে, তেমনি গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে স্বপ্নযাত্রা এ্যাম্বুলেন্স।  

রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস. এম. শান্তুনু চৌধুরী জানান, উপজেলা মূল ভূখন্ড থেকে চর আব্দুল্ল্যাহ ইউনিয়নটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। সেখানে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষের বাস। সে ভূখন্ডের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে স্বপ্নযাত্রা ওয়াটার এ্যাম্বুলেন্সটি এক অন্যান্য অবদান রাখছে।      

জেলা পরিষদের সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ভিপি হেলাল বলেন, জেলা প্রশাসকের উদ্যেগে লক্ষ্মীপুরে যে স্বপ্নযাত্রা এ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা হয়েছে, এটি দেশের কোথায়ও নেই। এ কার্যক্রম প্রথমে রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নে চালু করা হয়। স্বল্প ভাড়ায় এ এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-চট্রগ্রামসহ পাশের জেলায় গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা নেয়ার একটা ব্যবস্থা হয়েছে চরা রের মানুষের। এতে একদিকে যেমন মানুষ উজ্জীবিত তেমনি উপকৃত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন ডা: আহাম্মদ কবীর জানান, জেলার গ্রামীন পর্যায়ের প্রান্তিক মানুষ অসুস্থ্য হলে খুব সহজে এ এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে জেলা-উপজেলা ও ঢাকা-চট্রগ্রামসহ পাশের জেলার হাসপাতাল গুলোতে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পেয়ে সুস্থ্য হয়ে উঠছে।

স্বপ্নযাত্রা নামের এ এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মূল কারিগর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো: আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন “আমার গ্রাম, আমার শহর” বাস্তবায়নের জেলা ও উপজেলা প্রসাশনের অর্থায়নে ১৮টি স্বপ্নযাত্রা এ্যাম্বুলেন্স চালু করা হয়েছে। এটি অ্যাপস ভিত্তিক এবং এই সেবা পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট নিতিমালাও রয়েছে। ২৪ ঘন্টা লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় রোগী পরিবহন করছে। ফলে গ্রামের মানুষ শহরের সেবা পাওয়াসহ কমেছে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার। এই উদ্যোগ স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের যে লক্ষ্য ছিল সেটিও পূরণ হবে। তিনি আরও বলেন, এ স্বপ্নযাত্রা এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসটি যদি দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে চালু করা হয় তাহলে এ দেশের স্বাস্থ্যখাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here