চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অর্ধেকেরও কম বয়সী নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে খুন হলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক সালাম বাহাদুর ওরফে আব্দুস সালাম মিয়া(৬০)। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মেয়ে (২৩) ও মাকে (৫০) গ্রেফতার করেছে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান উপ-পুলিশ কমিশনার এইচএম আজিমুল হক।
উপ-পুলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার (১৫ জুলাই) রাত ১১টার পরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেইটে একজন বয়স্ক ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে শেরেবাংলা নগর থানার একটি টিম গিয়ে নিহত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের জখমের চিহ্ন দেখতে পায়। পরবর্তীতে জানা যায়, নিহত ব্যক্তির নাম সালাম বাহাদুর ওরফে আব্দুস সালাম মিয়া। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার।তিনি বলেন, লাশটি কে বা কারা জরুরি বিভাগের সামনে এনে রেখে গেছে তা নিয়ে প্রাথমিক তদন্তে বেশকিছু তথ্য পাওয়া যায়। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও আশপাশের এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা প্রায় সবগুলো অকার্যকর থাকায় ঘটনার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে মৃতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তার পরিবারকে খবর দেই। তারা আসার পর হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানাতে পারেননি। এরপর নিহতের ভাই শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা (মামলা নম্বর ৩১) দায়ের করেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ঘটনা সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে না পারায় রহস্য উদঘাটনে কিছুটা বেগ পেতে হয় পুলিশকে। বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় রহস্য উদঘাটন করা হয়। এরপর মানিকগঞ্জের সিংড়াই থানার গাজিন্দা এলাকা থেকে অভিযুক্ত মা ও মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত মা ও মেয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ৫-৬ বছর আগে সালামের সঙ্গে ওই মেয়ের পরিচয় হয়। পরে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভনে সালামের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। কিছুদিনের মধ্যে মেয়েটি বুঝতে পারে সালাম তাকে চাকরি দিতে পারবে না। এ বিষয়টি পারিবারিকভাবে জানাজানি হলে এ সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় মেয়ে। কিন্তু সালাম তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও আত্মীয়-স্বজনের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য চাপ দিতে থাকে। এরপর মেয়েটি কোনো উপায় না পেয়ে সে তার গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো জানায়, পূর্ব কথোপকথনের জেরে শনিবার বিকেল ৩টার দিকে সালাম মেয়েটির বাসায় পৌঁছায়। একপর্যায়ে মেয়ের মা ও সালামের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় কথা কাটাকাটি শুনে আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে আসে। ঘটনাস্থলে এসে তারা মা ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে সালামকে বেধড়ক মারধর করে।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, সালামের আসার বিষয়টি মা-মেয়ে এবং স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন আগেই জানতো। তারা সালামকে মারপিট করে গুরুতর আহত করে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখে। মূলত তারা আহত সালামকে আটকে রেখে অনৈতিক সুবিধা দেয় ও বিষয়টিকে ভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। যেহেতু তার বয়স বেশি ছিল তাই নানা শারীরিক সমস্যা ও মারপিটের কারণে দীর্ঘক্ষণ রক্তক্ষরণ হয় এবং তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।
পরে চিকিৎসার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পথে সালামের মৃত্যু হয়। মাঝপথে মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায় এবং তার মা সালামকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনের জরুরি বিভাগের প্রবেশপথে ফেলে রেখে চলে যায়। এইচএম আজিমুল হক আরও বলেন, সালামের মোবাইল ফোনের তথ্য যাচাইবাছাই করে সেখানে বিভিন্ন ধরনের মেসেজ আমরা পাই। এই মেয়ের সঙ্গে সালামের সম্পর্কের বিষয়টি পরিবার আগেই জানতো। গ্রেফতারকৃত মা ও মেয়েকে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।