কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলায় আহত পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সঞ্জয় কুমার প্রামানিক ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। টানা ৮ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বুধবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সঞ্জয়ের ছোট ভাই সম্পদ প্রামানিক ও ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহুরুল ইসলাম সঞ্জয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।এদিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয়ের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভেড়ামারায় বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে এক পুলিশসহ অন্তত ৮ জন আহত হয়েছে।
সঞ্জয় কুমার প্রামানিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীরা রাজপথে নেমে আসে। উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা ভেড়ামারা শহর। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে ভেড়ামারা-কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা-দৌলতপুর ও ভেড়ামারা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে। স্কুল ও কলেজসহ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধসহ বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীরা বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে ভেড়ামারা ডাকবাংলোর সামনে জড়ো হয়। তারা লাঠি-সোঁঠা নিয়ে দৌলতপুর-ভেড়ামারার প্রধান সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে। এ সময় আসামিদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বাধা দিলে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৮ কর্মী ও রিয়াজুল নামে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
মামলার প্রধান আসামি যুব জোট নেতা মোস্তাফিজুর রহমান শোভনের চাচা ইসলাম হাজীর বাড়ি ভাঙচুর ও অপর চাচা জানবার হোসেনের রড-সিমেন্টের দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়াও ভগ্নিপতি রবিউল ইসলামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আরেক আসামি ইয়ামিন হোসেনের বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও তার চাচা সালাউদ্দিনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
হামলা ও অগ্নিসংযোগের বিষয়ে উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোলাইমান মাস্টার বলেন, আমরা দলীয় নেতাকর্মীরা ডাকবাংলোর সামনে অবস্থান করছিলাম। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা তৃতীয় পক্ষের কেউ ঘটিয়েছে।
ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমুল ইসলাম ছানা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলাম। যুবজোট নেতা শোভনসহ আসামিরা ইতোপূর্বে অনেক অপকর্ম ঘটিয়েছে। তাদের দ্বারা এতদিন যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারাই হয়তো এ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। আমাদের দলের কেউ হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার সাথে জড়িত নয়। তবে ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাদের সমাবেশে আসার পথে পুলিশের হামলার শিকার হয়। এতে ৬ থেকে ৭ জন আহত হয়েছে। শামিমুল ইসলাম ছানা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
ভেড়ামারা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সোলাইমান হোসেন বলেন, হামলার নেতৃত্ব দেওয়া মোস্তাফিজুর রহমান শোভন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। সে এখন পর্যন্ত বহুজনকে আহত করেছে। আগামী দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য মেলার মাঠ দখল নিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা চালায় শোভন ও তার ক্যাডার বাহিনী। আমাদের দলের নেতা সঞ্জয় প্রামানিক ঘটনার প্রতিবাদ করায় পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. শরীফুল ইসলাম জানান, ভেড়ামারা শহরের এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে চারটি বাড়ি ও দুটি দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের দুইটি এবং পার্শ্ববর্তী মিরপুরের একটি ইউনিট বেলা ১১টা ১০ মিনিট থেকে কাজ শুরু করে বেলা ৪ টার সময় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে প্রাথমিকভাবে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ কর হয়নি।
ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহুরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোথাও যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য ভেড়ামারা শহরের মোড়ে মোড়ে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে ভেড়ামারা শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।