মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সামরিক বাহিনী এবং জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধির জেরে ফের বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য সেই ঢল ঠেকাতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নজরদারি ও পাহারা বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৮ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “গত তিন মাসে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে এবং আমরা জানতে পেরেছি যে আরও কয়েক হাজার (রোহিঙ্গা) প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। পরিস্থিতি রীতিমতো ভয়াবহ। তাই এখন সীমান্তে নজরদারি-প্রহরা বৃদ্ধি করা ব্যতীত আর কোনো উপায় আমাদের সামনে নেই।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কর্মকর্তা বলেন, “পরিস্থিতি সত্যিই বেশ কঠিন। কারণ মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ২৭১ কিলোমিটার। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী যদি তৎপর না থাকে, তাহলে শুধু আমাদের পক্ষে এই দীর্ঘ সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখা কঠিন। কারণ এত লোকবল এবং রসদ আমাদের নেই।”
প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে কয়েকটি পুলিশ স্টেশন এবং সেনা ছাউনিতে একযোগে বোমা হামলা হয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এই হামলার দায় স্বীকার করে।
হামলার জবাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। সেনা সদস্যদের নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের মুখে টিকতে না পেরে সে সময় আরাকান থেকে দলে দলে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সে সময় বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছিল। কক্সবাজারের টেকনাফ থানার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে তাদের রাখা হয়েছে।
এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সেসময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই সেসব প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে ক্ষমতায় আছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমানের সরকারের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে সঙ্গে মতপার্থক্য থাকলেও রোহিঙ্গা প্রশ্নে বিগত সরকারকেই তারা অনুসরণ করতে চান।
“আমরা যদি তাদেরকে নাগরিক হিসেবে নিবন্ধন করা শুরু করি, তাহলে (আরাকান) থেকে জোয়ারের মতো রোহিঙ্গারা আসা শুরু করবে এবং আমরা তা সামলাতে পারব না। তাই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো বা তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারটিকে আমরা আর কতদিন উপেক্ষা করব- এটি এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন।”