মো. হানিফ হাওলাদার। বরিশালের বানারীপাড়ায় মাদারকাঠি গ্রামে রাস্তার পাশের চা দোকানি। মাত্র ৫০০ টাকা মাসিক ভাড়ার জীর্ণশীর্ণ একটি দোকানে চা, পান, বিড়ি, বিস্কুট ও কলা বিক্রি করে কোনোমতে চার সদস্যের সংসার চলে তাঁর। হানিফের এ দোকানে সর্বসাকুল্যে ১০ হাজার টাকারও মালপত্রসহ পুঁজি নেই।
হানিফের এই চায়ের দোকানে মাসে ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৪০ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। ঘর মালিক সালাউদ্দিনের নামে বিদ্যুতের মিটার হলেও ব্যবহারকারী হিসেবে ভাড়াটিয়া হানিফ এ বিল পরিশোধ করে থাকেন। গত এপ্রিলে তার বিদ্যুৎ বিল হয়েছিল মাত্র ৩৪০ টাকা। চলতি মে মাসে সেই দোকানে বিদ্যুৎ বিল আসে দুই লাখ ৬০ হাজার ১৮৩ টাকা। ভুতুড়ে বিলের কাগজ হাতে পেয়ে দরিদ্র চা দোকানি হানিফ হতবাক ও দিশেহারা হয়ে পড়েন। চলতি মে মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে এ বিল পরিশোধ না করলে বিলম্ব মাশুলসহ (সুদ) আগামী ৯ জুনের মধ্যে গুনতে হবে দুই লাখ ৭২ হাজার ৫৭২ টাকা। নইলে তাঁর আয়ের একমাত্র উৎস এ দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। দুঃশ্চিন্তায় তার দু’চোথে অমানিশার ঘোর অন্ধকার নেমে আসে।
চা দোকানি হানিফ হাওলাদার বলেন, ‘দুই লাখ ৬০ হাজার ১৮৩ টাকার বিদ্যুৎ বিল দেখে আমার স্ট্রোক করার মত অবস্থা হয়। বানারীপাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিলিং সহকারী হ্যাপীর কাছে মুঠোফোনে বিষয়টি জানালে এসব বিষয়ে অফিস থেকে কেউ দোকানে আসতে পারবে না জানিয়ে প্রয়োজন হলে আমাকে অফিসে যেতে বলেন।’
হ্যাপীর সঙ্গে হানিফের যে মোবাইল নম্বরে কথা হয় বক্তব্য জানতে সেই নম্বরে কল দিলে বানারীপাড়া পল্লী বিদ্যুতের সাব জোনাল অফিসের জরুরী বিভাগের লাইনম্যান পলাশ রিসিভ করে জানান, বিলিং সহকারী হ্যাপী অন্য অফিসে বদলি হয়ে গেছেন। ফলে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
এদিকে পল্লী বিদুৎ অফিসের বিরুদ্ধে শুধু হানিফ নয় প্রায়ই গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলে বিশাল অঙ্কের ভুতুড়ে বিল করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বানারীপাড়া পৌর শহরসহ উপজেলার আট ইউনিয়নের গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আসার অভিযোগ নিত্যদিনের। এ অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিন বিদ্যুৎ অফিসে গ্রাহকরা ভিড় করেন। তর্কবিতর্ক হয় অফিসের লোকজনের সঙ্গে। এক পর্যায়ে অতিরিক্ত বিল আসার বিষয়ে চার্জ দিয়ে তাদের মিটার চেক করার আবেদন করতে হয়। মিটার পরিবর্তন করার পরেও এ সমস্যা কাটছে না। গ্রাহকদের অভিযোগ অফিসে বসে মনগড়া বিল প্রস্তুত করা হয়।
বরিশাল পল্লী বিদুৎ সমিতি-২’র বানারীপাড়া সাব জোনাল অফিসের এজিএম প্রকৌশলী মতিউর রহমান বলেন, ‘ওই গ্রাহকের বিশাল অঙ্কের বিলের কারণ মিটারের, রিডিংয়ের, মিটার রিডারের, বিল প্রস্তুতকারীর নাকি কম্পিউটারের যান্ত্রিক ভুল তা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’