মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেজ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। অনেক ধরনের প্যাকেজে বিভ্রান্তি, মেয়াদ ফুরালেই বেঁচে যাওয়া ডাটা/মিনিট অকার্যকর হওয়া, ইন্টারনেটের কাঙ্ক্ষিত গতি না থাকা, নেটওয়ার্কের দুর্বলতাসহ নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন তাঁরা। মানসম্মত সেবার জন্য প্যাকেজের পরিমাণ ও বৈচিত্র্য কমানোর দাবি তাঁদের। অপারেটররা বলছে, গ্রাহকের চাহিদাভেদে প্যাকেজ নকশা করা হয়। ব্যয় বেশি হওয়ায় ডাটার দাম কমানো যায় না। আর টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি জানিয়েছে, অপারেটর ও গ্রাহক উভয়ের মতামত নিয়ে মোবাইল প্যাকেজ সংখ্যা ও দামের বিষয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর রমনায় বিটিআরসির কার্যালয়ে মোবাইল অপারেটরদের সেবা (প্যাকেজ ও ডাটার মূল্য) সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা হয়। এতে অংশ নিয়ে গ্রাহক, মোবাইল অপারেটরের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, টেলিকম বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। অনলাইনেও গ্রাহকরা মতামত দেন।
বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক নাসিম পারভেজ তাঁর উপস্থাপনায় অনলাইনে গ্রাহক জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন। ৫৪ দশমিক ৯ শতাংশ মত দেন সর্বোচ্চ ৪০-৪৫টি প্যাকেজ থাকা উচিত। ৫২ দশমিক ২ শতাংশ মনে করেন প্যাকেজের মেয়াদ সাত দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড হওয়া দরকার। ৮৭ দশমিক ৮ শতাংশ মনে করেন মেয়াদকালের মধ্যে যে কোনো প্যাকেজ গ্রহণ করলেই নতুন প্যাকেজে অব্যবহৃত ডাটা যুক্ত হওয়া উচিত। প্রতি জিবির মূল্য যে কোনো মেয়াদের জন্য একই রকম থাকা উচিত বলে মত দেন ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। ৪৬ শতাংশ প্রতি জিবির জন্য সবসময় সর্বনিম্ন মূল্য থাকার পক্ষে মত দেন।
অনুষ্ঠানে টেলিটকের এক গ্রাহক অপারেটরটির নেটওয়ার্ক ঠিক করার ওপর মত দেন। রাজধানীর মিরপুরের এক গ্রাহক বলেন, ‘এত প্যাকেজ দিয়ে গ্রাহককে বিভ্রান্ত করা হয় কেন?’ দিনাজপুর থেকে আসা যুবক আবু রায়হানের দাবি, প্যাকেজের মেয়াদ সর্বনিম্ন সাত দিন করা হোক।
বাগেরহাট থেকে আসা এক গ্রাহক বলেন, ‘রবি ও এয়ারটেলের নতুন ডাটা কিনলে অব্যবহৃত ডাটা যুক্ত হয়, অন্য অপারেটরে কেন হয় না?’ মিঠুন সিকদার বলেন, ‘বিদ্যুৎ চলে গেলে নেটওয়ার্কও চলে যায়।’
বরিশাল থেকে অনলাইনে অংশ নেওয়া রায়হানুর রহমান শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা প্যাকেজ দাবি করেন। মর্তুজা নামে এক ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘অতিরিক্ত মেসেজে গ্রাহক বিরক্তি।’
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রাহকের মতামত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব-উল-আলম বলেন, প্যাকেজ, ডাটার মেয়াদ ও মূল্য নিয়ে উদ্বেগ বেশি। তিনটি বিষয়কে কীভাবে সমন্বয় করা যায়, সেটা দেখতে হবে।
লার্ন এশিয়ার সিনিয়র ফেলো আবু সাঈদ খান বলেন, ন্যূনতম মানসম্পন্ন সেবার ওপর জোর দেওয়া উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মইনুল জাবের বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ডাটা মূল্য নির্ধারণে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন হয় না।
মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব মহাসচিব এস এম ফরহাদ বলেন, অল্প গ্রাহকের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা যুক্তিযুক্ত হবে না।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম বলেন, গ্রাহকদের বেশি চয়েজ দেওয়া দরকার, সীমা বেঁধে দিলে প্রতিযোগিতার ক্ষতি হবে।
গ্রামীণফোনের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর হোসেন সাদাত বলেন, সবার মতামত নিলে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে অপারেটরদের প্রচুর পরিচালন ব্যয় হওয়ায় ডাটার দাম চাইলেই কমানো সম্ভব হয় না।
সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, অপারেটরদের ব্যয় এবং প্যাকেজ সংখ্যা সম্পর্কে বিটিআরসি ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই করছে। অপারেটর ও গ্রাহকদের মতামত নিয়ে মোবাইল ইন্টারনেটের নিম্নসীমা ও প্যাকেজ সংখ্যার বিষয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।