বিএনপির ফের ঢাকায় মহাসমাবেশের চিন্তা

0
68

সেপ্টেম্বরের শেষদিকে ঢাকায় ফের মহাসমাবেশ, গণসমাবেশ বা বড় ধরনের কর্মসূচির চিন্তা করছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে একদফার চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করতে চায় দলের হাইকমান্ড। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা চলমান থাকবে। গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পুরোপুরি সফল না হওয়ায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এমন ভাবনা দলটির। নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই রাজপথে দাবি আদায় করতে চায় রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। এ লক্ষ্যে নতুন করে আন্দোলন পরিকল্পনা সাজাচ্ছে দলটি। সে ক্ষেত্রে অক্টোবরে গিয়েও আন্দোলন চলমান থাকতে পারে।

নির্বাচন কমিশন থেকে সর্বশেষ বলা হয়েছে, নভেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হবে। তবে তপশিল ঘোষণা পর্যন্ত চলমান

আন্দোলনকে টেনে নিয়ে যেতে চায় না বিএনপির হাইকমান্ড। দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস মিলেছে।

সরকারবিরোধী আন্দোলন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকে বিএনপি। সে সময় দলটির পরিকল্পনা ছিল, ঢাকাকেন্দ্রিক লাগাতার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দ্রুততম সময়ে আন্দোলনকে লক্ষ্যে পৌঁছানো। কারণ, মহাসমাবেশ ঘিরে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী তখন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তবে মহাসমাবেশের পরদিন ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি দলের চাহিদা অনুযায়ী বাস্তবায়িত না হওয়ায় কর্মসূচিকেন্দ্রিক নতুন চিন্তাভাবনা শুরু করে হাইকমান্ড। লাগাতার কর্মসূচির পরিকল্পনা থেকে সরে এসে বিরতি দিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে ১৩ দিন পর গত শুক্রবার ঢাকায় গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে সমন্বয়হীনতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি সামনে চলে আসায় আন্দোলনে গতি আনতে এরই মধ্যে কিছু সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিএনপির হাইকমান্ড। একই সঙ্গে আগামীর কর্মসূচি পুরোপুরি সফলে দলকেও কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো নেতা নিষ্ক্রিয় থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে দায়িত্বে অবহেলার কারণে ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে দিয়ে সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবদলের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপিসহ আরও কয়েকটি জায়গায় পরিবর্তন আসতে পারে বলে আলোচনা আছে। উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান দুর্নীতির একটি মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। তাকে নিম্ন আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। তার অনুপস্থিতিতে কাউকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা বা কমিটি পুনর্গঠন করা হতে পারে বলে কেউ কেউ ইঙ্গিত দিয়েছেন। অবস্থান কর্মসূচি থেকে প্রস্থানের কারণে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে হাইকমান্ড নাখোশ হলেও যোগ্য রিপ্লেসমেন্ট না থাকায় এখনই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। তবে কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের অনেকের অভিমত, দায়িত্বে অবহেলায় ছাত্রদল সভাপতি শ্রাবণের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও একই ইস্যুতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সেক্রেটারির বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি দল। এমনটি হলে সারা দেশের নেতাকর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। নেতাকর্মীরা মনে করবে, হাইকমান্ড নাখোশ হলেও কারও কারও প্রতি তার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। সে কারণে কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকলেও সবার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। এমনটি হলে এর নেতিবাচক প্রভাব আন্দোলনে পড়বে।

তবে একদফার চূড়ান্ত আন্দোলন সামনে রেখে নিষ্ক্রিয়দের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দলে কোনো ত্রুটি থাকলে তা-ও কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপির হাইকমান্ড এই বিষয়গুলো দেখভাল করছে বলে জানা গেছে।

এদিকে অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির কঠোর সাংগঠনিক পদক্ষেপের ছাপ লক্ষ করা গেছে গণমিছিলে। মাথার ওপর সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থার খড়্গ থাকায় কর্মসূচিতে ঢাকার দুই মহানগর এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা ব্যাপকহারে অংশগ্রহণ করেন। নিষ্ক্রিয় অনেক নেতাকেও সেখানে দেখা গেছে। এটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে দল।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগস্টে বিএনপির বড় কোনো কর্মসূচি নেই। আগামীকাল সোমবার গুলশানের একটি হোটেলে বিচার বিভাগ, গ্রেপ্তার, মামলা-হামলা ইস্যুতে একটি সেমিনার করবে দলটি। এ ছাড়া এ মাসেই আসতে পারে একদফার আরও একাধিক কর্মসূচি, যেটা আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিক্ষোভ, মিছিল, পদযাত্রা, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি আসতে পারে। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে বিএনপি আরও সংঘবদ্ধভাবে মাঠে নামবে। সে ক্ষেত্রে সাংগঠনিক শক্তি এবং যুগপৎ আন্দোলন আরও জোরালো করা হবে। ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর একদফা দাবিতে টানা কর্মসূচি শুরু করবে দলটি। তখন কর্মসূচি হবে আবার ঢাকাকেন্দ্রিক। আর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় মহাসমাবেশের মতো বড় কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায় হাইকমান্ড। এরপর থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে অক্টোবরে গিয়েও আন্দোলন চলমান থাকতে পারে। তখন ঢাকায় নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, গণভবনসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের সঙ্গে টানা অবস্থানের কর্মসূচি আসতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিএনপির আন্দোলন এখন শুধু বিএনপির নয়, এটি দেশের ১৮ কোটি মানুষের আন্দোলন। বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে জনগণের যে অংশগ্রহণ, সেটি তাই প্রমাণ করে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান একদফার আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে। বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই দাবি আদায় করবে। সে ক্ষেত্রে যখন যে কর্মসূচি দেওয়া প্রয়োজন, সেটিই দেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here