ফ্রিল্যান্সারদের টার্গেট করে ডলার বেচাকেনার নামে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া জাকির হোসনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। জাকির ১০টি ভুয়া ফেসবুক আইডি দিয়ে এ প্রতারণা করে আসছিলেন।
জাকিরের ভুয়া ফেসবুক আইডিগুলো হল অমিত বর্মন কল্লোল, সিদ্দিকুর রহমান, জুবাযেদ আহম্মেদ আনসারী, চন্দন বিশ্বাস পুলক, খাঁন মুহাম্মদ সাব্বির, কার্তিক দাস, আতিকুর রহমান রাসেল, আব্দুল কাদের, নাবিল হাসান মধু, জিআর পলাশ।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের (দক্ষিণ) একটি টিম। সোমবার (২৭ মার্চ) ডিএমপির মতিঝিল থানায় ইহসান ইফতেখার লাবীব (২০) নামে এক ভুক্তভোগীর মামলার ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার এজহারে বলা হয়, ইহসান ইফতেখার লাবীব একজন ফ্রিল্যান্সার। তিনি ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কাজ করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাকিরের কাছ থেকে ডলার কিনতে গিয়ে প্রতারিত হন। ফ্রিল্যান্সারের কাজের জন্য লাবীবের ডলারের প্রয়োজন হয়। ডলার কেনার জন্য জাকিরের একটি পোস্ট দেখে তার সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন লাবীব। লাবীব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে চাইলে জাকির তাকে বিকাশে টাকা পাঠাতে বলেন। এতে সন্দেহ হওয়ায় লাবীব তার কাছ থেকে আর ডলার কেনেননি। পরে গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জরুরি ডলারের প্রয়োজন হলে জাকিরের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করেন লাবীব। ৩০০ ডলারের জন্য সে জাকিরকে বিকাশে ৩০ হাজার ৯০০ টাকা পাঠান। টাকা পাঠানোর পর অপেক্ষা করে লাবীব দেখেন তার পেওনিয়ার একাউন্টে আসেনি। পরে সে ঐ ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করতে গেলে দেখেন তাকে ইতোমধ্যে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
পরে তিনি এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাকিরের মূল টার্গেট ফ্রিল্যান্সাররা। তিনি কমপক্ষে ১০টি ভুয়া ফেসবুক আইডি দিয়ে এই প্রতারণা চালাতেন। ফ্রিল্যান্সারদের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে এই ভুয়া ১০টি আইডি দিয়ে যুক্ত হতেন। পরে এসব গ্রুপ থেকে ফ্রিল্যান্সারদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতেন। এক সময় তার ১০টি ভুয়া আইডিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফ্রিল্যান্সার বন্ধু হয়ে গেলে সে সুযোগ বুঝে বিকাশের মাধ্যমে ডলার বিক্রির পোস্ট দিতেন। পোস্ট দেখে কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ডলার কেনার জন্য বিকাশে টাকা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তিকে ব্লক করে দিতেন জাকির।
যে কারণে জাকিরের ফাঁদে পা দিতেন ফ্রিল্যান্সাররা
ডিবি সূত্রে জানা যায়, ডলার দিয়ে অনলাইনে কোনো কিছুর পেমেন্ট (যেমন- ফেসবুক এডস, ডোমেইন, সার্ভার, ক্লায়েন্ট রিফান্ড) করতে গেলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে প্রতি লেনেদেনে সর্বোচ্চ ৩০০ ইউএস ডলার পেমেন্ট করা যায়। তবে ফ্রিল্যান্সারদেরই এলসি করে ডলার পাঠানোর সুযোগ নেই। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ডলার বিক্রির কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় জাকির।
জাকিরের প্রতারক হয়ে উঠার গল্প
মামলাটির তদারকি কর্মকর্তা ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাকির হোসেন একদিন ফেসবুকে পণ্য কেনার জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পায়। পণ্য কেনার জন্য সে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করলে অজ্ঞাতনামা প্রতারক তাকে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য বলে। পরবর্তীতে জাকির বিকাশে টাকা পাঠালে প্রতারক তাকে পণ্য না দিয়ে ব্লক করে দেয়। এরপর থেকে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতারণা শুরু করে জাকির। একই পদ্ধতিতে নিজের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকার বিনিময়ে ডলার বিক্রির জন্য স্ট্যাটাস দিতে থাকেন। এরপর ভিকটিমরা যখন ডলার কেনার জন্য ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করে, জাকির তাদের কাছ থেকে বিকাশ, নগদ, রকেট ও বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা নিয়ে ভিকটিমদের ডলার না দিয়ে মেসেঞ্জারে ব্লক করে দেয়।
জাকিরের মতো প্রতারকদের হাত থেকে বাঁচতে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বৈধভাবে ডলার কেনা উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্যান্য মাধ্যমে ডলার কেনাবেচা করলে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এসব বিষয়ে ফ্রিল্যান্সারদেরকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।
এসএএ/