রাজধানীসহ দেশের ৪৯ জেলাজুড়েই বইছে লু হাওয়া আর প্রচণ্ড দাবদাহ। তীব্র গরমে জনজীবনে হাসফাস অবস্থা। এ অবস্থা চলছে টানা এক সপ্তাহ ধরে। গরমের তীব্রতায় বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। রাত-দিনের একটানা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে-লু হাওয়া আর দাবদাহের এই তীব্র গরম থাকবে আরও অন্তত সাত দিন। গত সাত দিন ধরে তাপমাত্রার পারদ শুধু ওপরের দিকেই উঠছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে- আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি বা মেঘের সম্ভবনা নেই। যে কারণে ধারাবাহিকভাবে গরমের তীব্রতা বাড়লে সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে মানুষের দুর্ভোগ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মঙ্গলবারের পূর্বাভাস বলছে, আজকের দিন রাতের তাপমাত্রা গতকালের তুলনায় বাড়বে। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে তাপমাত্রা যতটা, তার চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। দিনের বেলা শহরজুড়ে যেন লু হাওয়া বইছে। গরমের সঙ্গে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ধুলার পরিমাণ বেড়ে কষ্ট আর দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। ২৪ ঘণ্টার হিসাবে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, এপ্রিল মাস দেশের সবচেয়ে উত্তপ্ত সময়। এই সময়ে একাধিক দাবদাহ সৃষ্টি হয়। তবে এই দাবদাহ এরই মধ্যে প্রায় এক সপ্তাহ অতিক্রম করে গেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি ও মেঘের তেমন সম্ভবনা নেই। ফলে আমাদের এই গরমের কষ্ট সহ্য করতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, দেশের ৪৯টি জেলার ওপর দিয়ে দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। জেলাগুলো হচ্ছে বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মৌলভীবাজার জেলা।
এ সময়ে তাপপ্রবাহ আর দাবদাহের ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার জন্য বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে হবে। ধানের শিষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই দুই-তিন ইঞ্চি দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে। আমগাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনে গাছের শাখা-প্রশাখায় পানি স্প্রে করা যেতে পারে। সবজির জমিতে আগামী এক সপ্তাহে মাটির ধরন বুঝে প্রয়োজন অনুযায়ী দুই থেকে তিনটি সেচের ব্যবস্থা করা। ফল ও সবজির চারাকে তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য মালচিং ও সেচ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি অধদপ্তর।