বৃদ্ধ বয়সে যে আক্ষেপ করছেন বিল গেটস!

0
68

বিল গেটস, মার্কিন বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বিশ্বের শীর্ষ বিলিয়নিয়ারদের একজন । বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি মানবসেবা ও দানের জন্যও সমান খ্যাতি রয়েছে তার। বর্তমানে তার বয়স ৬৭। জীবনের এই সময়ে এসে তারুণ্যকে মিস করছেন বিল গেটস।

তাই সম্প্রতি নর্দার্ন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় মার্কিন বিলিয়নিয়ার এই বলেন, তারুণ্য পেরিয়ে বার্ধক্যে পা রাখার আগপর্যন্ত তিনি উপলব্ধিই করতে পারেননি যে কাজের বাইরেও মানুষের আলাদা একটা জীবন রয়েছে।গত শনিবার নর্দার্ন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সূচনা বক্তৃতায় গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি এই কথা বলেন।

বিল গেটস বলেন, “যখন আমি তোমাদের মতো বয়সে ছিলাম, তখন আমি অবকাশ যাপনে বিশ্বাস করতাম না। সপ্তাহান্তে ছুটি নেওয়াতে বিশ্বাস করতাম না। আমি আমার আশেপাশের সবাইকে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতাম।”

মাইক্রোসফট লঞ্চ করার জন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় সিমেস্টারে থাকাবস্থায়ই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আসেন বিল গেটস। এনএইউ’র গ্র্যাজুয়েটদের তিনি বলেন, “কাজের গতি কিছুটা শিথিল করা অর্থ এই নয় যে আপনি অলস।”

এই বিজনেস ম্যাগনেট জানান, মাইক্রোসফটের শুরুর দিনগুলোতে তিনি কর্মজীবনে ভারসাম্য আনার গুরুত্ব বুঝতে পারেননি, তাই কোন কোন কর্মী অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাচ্ছে তা নজরে রাখতেন সেসময়।

“আমার এই শিক্ষাটা পেতে যতদিন সময় লেগেছে, তোমাদের যেন এত দীর্ঘ সময় না লাগে। নিজের সম্পর্কগুলোকে যত্ন করার জন্য, সফলতা উদযাপনের জন্য এবং ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্যেও সময় নাও। যখনই প্রয়োজন মনে হবে বিরতি নাও। তোমার আশেপাশের মানুষের যখন এই বিরতি দরকার হবে, তখন তাদের সাথেও স্বাভাবিক আচরণ বজায় রাখো।”

এর আগেও বিল গেটস স্বীকার করেছিলেন যে কাজের নৈতিকতার ক্ষেত্রে কর্মীদের কাছ থেকে উচ্চ প্রত্যাশা ছিল তার। তার জীবনীকাররা (বায়োগ্রাফার) 

সিএনবিসিকে জানিয়েছিলেন, মধ্যরাতে নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নানা সমালোচনা করে মেইল পাঠাতেন বিল গেটস।

২০১৯ সালে নিজের ব্লগে এই মার্কিন ধনকুবের লিখেছিলেন, “যখন আমি মাইক্রোসফটে ছিলাম, তখন আমার সঙ্গে যারা কাজ করত তাদের সাথে আমি বেশ কড়া আচরণই করেছি। এর ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলতা এসেছে, কিন্তু আমি নিশ্চিত কিছু কিছু ব্যাপার মাত্রাতিরিক্ত ছিল।”

সূচনা বক্তব্যে গেটস সদ্য স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থীদের উপদেশ দেন, জীবনের সব পর্যায়েই যেন তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন করতে কিছুটা সময় ব্যয় করে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরেও অনেককিছু থেকে শিক্ষালাভ করে।

বিল গেটস বলেন, “এই মুহূর্তে হয়তো ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তোমাদের কাছে অনেক বড় একটা চাপ মনে হবে। এমনও মনে হতে পারে যে এখন যা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি সেটাই স্থায়ী। কিন্তু না, তা নয়। আগামীকাল তুমি যা করবে- বা আগামী ১০ বছর ধরে যা করবে, তা-ই যে সারাজীবন করতে হবে এমনটা নয়।”

এছাড়াও, জীবনে চলার পথে বন্ধুত্বের প্রতি নির্ভর করার পরামর্শ দেন বিল গেটস। তিনি গ্র্যাজুয়েটদের জলবায়ু পরিবর্তন বা এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্টতার মতো এমন সব প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতে বলেন, যেগুলো জরুরি সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবে।

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “তোমরা এমন এক সময়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছো যখন মানুষকে সাহায্য করার বিপুল সুযোগ তোমাদের সামনে রয়েছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শিল্প ও কোম্পানি গড়ে উঠছে, যেখানে তোমরা জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি বিশ্বে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখারও সুযোগ পাবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে আগের যেকোনও সময়ের চাইতে এখন কোনও বিষয়ে বড় প্রভাব রাখা সহজ হয়ে উঠেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here