অবৈধ দখলে বিলীনপ্রায় বারোখালি, প্রশাসন নিরব

0
69

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বংশাই ও লৌহজং নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী বারোখালি খালটি দখল হতে হতে এখন বিলীনের পথে। এই অবৈধ দখল অব্যাহত থাকলে ঐতিহ্যবাহী খালটি হারিয়ে যাবে। দখলের কারণে অনেক জায়গায় খালের অনেকটাই সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। 

স্থানীয়দের আশঙ্কা, পৌর এলাকার মুল কেন্দ্র মির্জাপুর বাজারের নোংরা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।

নোংরা পানি অপসারণ না হতে পারলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে পড়বে বলে এলাকাবসী আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

মির্জাপুর থানা ও শহীদ ভবানি প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত বংশাই ও লৌহজং নদীর মধ্যে সংযোগ করেছে বারোখালি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার এবং প্রস্থ গড়ে ১২৬ ফুট। খালটি খরস্রোতা ছিল।

বছরের পুরো সময়ই ছোট-বড় মালবাহী নৌকা চলাচল করতো। উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ নৌকাযোগে এই খাল দিয়ে মির্জাপুর সদরের হাটে আসতেন। আশির দশক থেকে খালের দুই পাড় দখল হতে শুরু করে। দখলকৃত স্থানগুলো একাধিকবার হাতবদল হয়ে এখন বসতবাড়িসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে।

খালটির দুই পাড় অব্যাহত দখলের ফলে বর্তমানে এর প্রস্থ মাত্র ৫০ ফুটে দাঁড়িয়েছে বলে উপজেলা ভূমি অফিসের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন। 
মির্জাপুর পৌর শহরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র স্থান এই বারোখালি। কিন্তু দখলের ফলে নাব্যতা হারিয়েছে। অবৈধ দখলমুক্ত করে খালটির নাব্যতা ফিরিয়ে না আনতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে বাজার এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে পড়বে বলে এলাকাবাসীর আশঙ্কা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, খাল দখল করে ভবন নির্মাণের কথা উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হলে তারা সরেজমিনে এসে কাজ বন্ধ করেন।

কয়েক মাস যাবার পর অজ্ঞাত কারণে আবার ভবনের কাজ শুরু হয়।  

উয়ার্শী গ্রামের আব্দুস সালাম মিয়া জানান, বারোখালী খাল সংলগ্ন ভোলা ব্যাপারীর ছয় শতাংশ জমি কেনার জন্য বায়না করেন। পরে পৌর ভূমি অফিসে যোগাযোগ করা হলে তাকে জানানো হয়, ওই জমির বেশ কিছু অংশ খালের মধ্যে পড়েছে। এজন্য তিনি আর ওই জমি ক্রয় করেননি। কিন্তু তার কয়েক মাস পর দেখেন, ওই জমি বিক্রি হয়েছে এবং পরবর্তিতে ছয় তলা ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। এটা কিভাবে সম্ভব!

শহীদ ভবানি প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী  অধ্যাপক মো. শহিদুল্লাহ জানান, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পৌর শহরের পানি নিষ্কাশন ও নব্যতা ফিরিয়ে আনতে ঐতিহ্যবাহী বারোখালী খালটি দখলমুক্ত করা প্রয়োজন। 

উপজেলা সদরের পুষ্টকামুরী গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ভিপি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু আহমেদ বলেন, ‘খালটি দিয়ে চৈত্র মাসেও পানি প্রবাহিত হতে দেখেছি। আগে এই খান দিয়ে পাট, নারিকেল ও ধানভর্তি বড় বড় নৌকা চলাচল করতো। দখল হতে হতে এখন এটি আর খাল নেই। শহর রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এদিকে নজর দেওয়া দরকার।’

মির্জাপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি গোলাম ফারুক দিদ্দিকী বলেন, খালটিতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। 

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মির্জাপুরবাসীর দাবির সাথে প্রশাসনও একমত। অচিরেই এই খালটি অবৈধ দখলমুক্ত করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার শিমুল বলেন, ‘প্রয়াত মেয়র সাহাদাৎ হোসেন সুমন খালটি দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। খালটি খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রকল্প হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় আর অগ্রসর হওয়া যায়নি। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও প্রতিনিধিদল এসেছিল। পরে তারাও কোনো যোগাযোগ করেননি। তবে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here