চট্টগ্রাম নগরীতে ৬০৩ জনের নামোল্লেখ করে ছিনতাইকারীর একটি তালিকা তৈরি করেছে সিএমপির গোয়েন্দা শাখা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, মাদকসেবী ও বিভিন্ন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের নামও এই তালিকায় আছে। তিনটি ক্যাটাগরিতে ছিনতাইকারীদের নাম, ঠিকানা ও মামলার সংখ্যা উল্লেখ করে তাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সক্রিয় ছিনতাইকারী ৪৭৩ জন, জেলহাজতে আছে ৪১ জন এবং নিষ্ক্রিয় হিসেবে ৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নিষ্ক্রিয়দের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন স্বাভাবিক পেশায় যুক্ত থাকলেও ছিনতাইকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ৪৬ জনের নাম, আগের ঠিকানা ও মামলার উল্লেখ করা হলেও সেই ঠিকানায় গিয়ে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৪ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম নগরীতে ছিনতাইকারীদের একটি তালিকা তৈরি হয়েছিল। এরপর আট বছরে ডাকাত, ছিনতাইকারীসহ পেশাদার অপরাধীদের কোনো তালিকা তৈরির উদ্যোগ সিএমপির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। পুলিশ বলছে, ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের সুবিধার্থে গত তিন মাস ধরে এই তালিকা করা হয়েছে। তালিকা তৈরির পর মোট ৮৮ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৬ জন তালিকাভুক্ত। জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীতে এ মুহূর্তে ‘টানা পার্টি’ হিসেবে পরিচিত ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য সবচেয়ে বেশি। এরা সাধারণত ভোরে এবং সন্ধ্যার পর সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে বের হয়। অফিসগামী এবং অফিসফেরত রিকশাযাত্রী ও পথচারীরাই তাদের টার্গেটে থাকে। তারা চলন্ত অটোরিকশা থেকে ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। অথবা নির্জন স্থানে পথচারীদের আটকে টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। শুধু যেসব ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগী শারীরিকভাবে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান, তাদের ক্ষেত্রেই মামলা রেকর্ড করা হয়। টানা পার্টি ছাড়াও মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি সক্রিয় থাকলেও তাদের উৎপাত আগের চেয়ে কমেছে বলে পুলিশ দাবি করছে। জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে চট্টগ্রাম নগরীর ১৬ থানায় ৪৮টি ছিনতাইয়ের মামলা রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে কোতোয়ালি থানায়। নতুন তালিকা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ৭১ জন ছিনতাইকারী আছে বন্দর থানা এলাকায় এবং সবচেয়ে কম ছয় জন ছিনতাইকারী আছে ডবলমুরিং থানা এলাকায়। এছাড়া আকবর শাহ এলাকায় ৬৮, বাকলিয়া এলাকায় ৬৫, চান্দগাঁওয়ে ৫৮, খুলশীতে ৫৭ এবং কোতোয়ালি থানা এলাকায় ৫০ জন ছিনতাইকারীকে চিহ্নিত করে তালিকায় রেখেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। হালিশহর এবং কর্ণফুলী থানা এলাকায় ছিনতাইকারী চিহ্নিত হয়েছে ১১ জন করে। এছাড়া সদরঘাট থানায় ২২, চকবাজার ও পাঁচলাইশে ২৯ জন করে, বায়েজিদ থানায় ৪২, পাহাড়তলী ৩০, ইপিজেড ৩৮ এবং পতেঙ্গায় ১৬ জনকে শনাক্ত করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ জানায়, অতীতের সক্রিয় ছিনতাইকারীদের মধ্যে অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। এদের মধ্যে হোসেন ও দুলাল রিকশা চালায়, ফোরকান চটপটি বিক্রি করে, রাসেল পুলিশের ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ করে, শহীদ আলম লেদু মাছ বিক্রি করে, মানিক টমটম চালক এবং জাবেদ কাপড়ের দোকানে চাকরি করে।