দুর্বৃত্তদের হামলায় খুন হয়েছেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিম।
বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বুধবার অফিসের কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম ও তার সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু। পথে বকশিগঞ্জ পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অতর্কিত সামনে থেকে আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেওয়া হয় নাদিমকে।
এরপর ১০-১২ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনে হিঁচড়ে এক অন্ধকার গলিতে নিয়ে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করেন তাকে। সে সময় সহকর্মী মুজাহিদ তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করেন তারা। পরে স্থানীয় বাসিন্দাসহ মুজাহিদ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য।
বুধবার রাত ১০টার দিকে বকশিগঞ্জের পাথাটিয়ায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথের সামনে ঘটে যাওয়া এমন হামলার নৃশংসতার বিবরণ দেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু।
তিনি বলেন, সাধুরপারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুর বিরুদ্ধে নাদিমসহ আমরা কয়েকজন নিউজ করেছিলাম সেখান থেকেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন আমাদের ওপর। পরে আমাদের নামে ডিজিটাল আইনে মামলাও করেন তিনি। সেই মামলা গতকাল ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দিয়েছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছিল। এর দুই তিন ঘণ্টা পর রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাদিমের ওপর হামলা হয়।
তিনি আরও বলেন, নাদিমকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গলা ধরে ফেলে দিয়ে তারপর পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুর লোকজন। ঘটনার সময় ওই গলিতে অন্ধকারে আড়ালে দাঁড়িয়েছিলেন চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু। সে সময় তার ছেলে ফয়সাল, রিফাত, রেজাউল, মনির, সাইদসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। মারধরের সময় আমি আটকাতে গেলে আমাকেও তারা মারেন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী চলে যায়। পরে নাদিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গত ১০ মে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এ নিয়ে বাংলানিউজে ‘দুইবার বিয়ের পরও সন্তান-স্ত্রীকে অস্বীকার করছেন ইউপি চেয়ারম্যান!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পরে ১৪ মে তার স্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ‘আমি আমার স্বামী চাই, একসঙ্গে সংসার করতে চাই’ শিরোনামে বাংলানিউজে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পরে ২০ মে সাবিনা ইয়াসমিন তার স্বামী মাহামুদুল আলম বাবুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার অথবা পদ থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। বাবু জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়েও বাংলানিউজে ‘আ.লীগ থেকে স্বামীর বহিষ্কার চেয়ে স্ত্রীর আবেদন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
এর আগে গত ১৪ মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জামালপুরে নাদিমসহ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহামুদুল আলম বাবু। ১৪ জুন আদালত মামলাটি খারিজ করেন।
এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলানিউজের সম্পাদক জুয়েল মাজহার। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।