বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামছুন্নাহারের বিরুদ্ধে পরিবার কল্যাণ সহকারীদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশনের সম্মানি ভাতা যথাযথ ভাবে প্রদান না করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া উঠেছে।
রবিবার (২৫ জুন) উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের পরিবার কল্যাণ সহকারী মোছা. আফরোজা বেগম, রাবেয়া খাতুন, রিনা খাতুন, সোম্মা, হাবিবা সুলতানা, নিলুফা ইয়াসমিন, মার্জিনা আক্তার, কাত্যায়নী বর্মন, শরিফা খাতুন, নাছিমা খাতুন, আজমিন, ফারহানা নুসরাত, মাহবুবা খাতুন, সম্পা সরকার, জান্নাতি, সুরাইয়া, হেলেনাসহ ১৭ জনের স্বাক্ষরিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন।অভিযোগ জানা যায়, তারা সকলেই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন স্কুল পর্যায়ে ১ম ও ২য় ডোজ প্রদানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। টিকা প্রদানের সরকারি ভাতা ও ব্র্যাক কর্তৃক সম্মানি ভাতা সরকারি নিয়মানুসারে জনপ্রতি ৪০০ টাকা হারে প্রদান করার নির্দেশনা রয়েছে। পরিবার কল্যাণ সহকারীরা বিগত ৬ মাসে ২৪ দিন এই কার্যক্রম পরিচালনা করেন। নিয়মানুসারে জনপ্রতি ৫ হাজার ২০০ টাকা করে সর্বমোট ২ লাখ ৮১ হাজার ২০০ টাকা বৈধ ভাতা প্রাপ্য।
তারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শামছুন্নাহারের কাছে তাদের প্রাপ্ত সম্মানি ভাতা চাইতে গেলে তিনি তাদেরকে জনপ্রতি ৩ হাজার ২০০ টাকা করে মোট ১ লাখ ৮২ হাজার ৪০০ টাকা প্রদান করতে সম্মত হন। পরিবার কল্যাণ সহকারীরা জনপ্রতি ২ হাজার টাকা কম নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাদের ন্যার্য প্রাপ্ত ৫ হাজার ২০০ টাকা সম্মানি ভাতা দাবি করেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাদের ন্যার্য সম্মানি ভাতা প্রদানের অস্বীকৃতি জানিয়ে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের সাথে অসাদাচারণ, বিভিন্ন প্রকার হয়রানিসহ ক্যাশিয়ার/প্রধান সহকারী রওশন জামিনকে তার অফিসিয়াল দায়িত্ব প্রদান না করে পছন্দনীয় দুর্নীতির অপরাধে বর্তমান রাজশাহীর পুঠিয়ায় কর্মরত জুনিয়র স্বাস্থ্য সহকারী রবিউল ইসলামের দ্বারা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ইয়াসমিন আক্তার, সাহিদা ও আনোয়ারা রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকের নিকট অভিযোগও দিয়েছেন। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও জুনিয়র স্টোর কিপার রবিউল ইসলামকে স্টোর কিপারের দায়িত্ব প্রদান করেন। চলতি বছরের জুন মাসের প্রায় ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এমএসআর দ্রব্য (গজ, ব্যান্ডেজ, বেড কভার, সার্জিক্যাল দ্রব্যাদি) যথাযথ নিয়মে ক্রয় না করে ঠিকাদারের সাথে যোগসাজস করে বিল পরিশোধ করার অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে অতি নিম্নমানের কোম্পানির কাছ থেকে আয়ুর্বেদীয় ওষুধ ক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক জানান, পরিবার কল্যাণ সহকারীদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ভাতা যথাযথ ভাবে না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শামছুন্নাহারের বিরুদ্ধে বহু অভিযেগা রয়েছে। তিনি এ বিষয়টি বগুড়া জেলা মাসিক সভায় উপস্থাপনও করেছেন।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য সেবার নামে রোগীদের হয়রানীসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে প্রতি মাসের মাসিক আইন-শৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে তিনি কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা কমিটির সদস্য এমদাদুল হক জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শামছুন্নাহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। রোগীরা প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হচ্ছে। গত দেড় বছরে স্বাস্থ্য সেবা কমিটির কোন সভা করা হয়নি। বিষয়গুলো তিনি আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় উপস্থাপন করেছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শামছুন্নাহার জানান, তার বিরুদ্ধে পরিবার কল্যাণ সহকারীদের অভিযোগ তিনি দেখেননি। অভিযোগ হাতে পেলে ওই বিষয়ে তিনি মন্তব্য করবেন।
অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিষয়ে কেন সাংবাদিকরা আগবাড়িয়ে ভ্যাজাল করতে আসছেন। তিনি আর কোনও প্রকার মন্তব্য না করে সাংবাদিকদের সাথে অসদাচারণও করেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ নভেম্বর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার শামছুন্নাহারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাঈদ মো: আব্দুল্লাহ্-আল-হানিফ, সহকারী সার্জন ডা. এ এইচ এম তনয় মোস্তাফিজসহ ১৯ জন চিকিৎসক স্থানীয় সংসদ সদস্যর সুপারিশে ঢাকা মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের নিকট এই অভিযোগ করেছিলেন। অজ্ঞাত কারণে অভিযোগের তদন্ত মাঝ পথেই থেমে রয়েছে।