ডলার সংকট মেটাতে ডিজিটাল মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশসহ ইউরোপ- আমেরিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ডিজিটাল বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার বিষয় অনেক দিন ধরেই অনুধাবন করছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি বাধা ছিল, যা দূর করতে এবং ডিজিটাল কমার্স সম্প্রসারণে ‘ক্রস বর্ডার ডিজিটাল বাণিজ্যনীতিমালা’ প্রণয়ন করা জরুরি। এরই মধ্যে এ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৫ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ‘ক্রস বর্ডার ডিজিটাল বাণিজ্য নীতিমালা’ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই মধ্যে এর খসড়া প্রস্তুতের কাজও শুরু হয়েছে। সেই বৈঠকের একটি কার্যপত্র বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, অর্থবিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতরসহ ২৩টি বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্টদের কাছে এ বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়। সূত্র জানায়, এই নীতিমালার নাম হবে ‘ক্রস বর্ডার ডিজিটাল বাণিজ্য নীতিমালা।’ নীতিমালার ওপর ১৫ জুলাই এর মধ্যে অংশীজনদের মতামত চাওয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে প্রস্তাবিত নীতিমালার একটি চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন ও পরিসরের ওপর কর্মশালারও আয়োজন করা হবে।এদিকে ২৫ জুনের সভার ওই কার্যপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, ক্রস বর্ডার ডিজিটাল বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বাধা চিহ্নিত হয়েছে। এসব বাধা দূরীকরণ ও একটি নীতিমালা প্রণয়নে আটটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এগুলো হলো- আন্তসীমান্ত ডিজিটাল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা বিশ্বের যে কোনো দেশে প্রবেশ ও লেনদেন সহজীকরণ ও সরলীকরণ করা। আন্তসীমান্ত বাণিজ্য হতে কর ও রাজস্ব আহরণ করা। উন্নত ইলেকট্রনিক ডাটা এবং এর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। পণ্য ও সেবার নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা দেওয়া। আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ ও উন্নীতকরণ। ডাটা সংগ্রহ, পরিমাণ ও বিশ্লেষণ করা। জনসচেতনতা তৈরি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং অংশীদারি নিশ্চিতকরণ। জানা গেছে, এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে একটি খসড়া প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নীতিমালা তৈরিতে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের সহযোগিতা নিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন জানান, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে রপ্তানি বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যার মাধ্যমে দেশের চলমান ডলার সংকট নিরসন করা সম্ভব। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন কেবল বিশ্বের অনুকরণীয় দৃষ্টান্তই নয়, এ কর্মসূচি ২০৪১ সালে জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দারিদ্র্য ও বৈষম্যহীন উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের হাতিয়ার। এ জন্য রপ্তানি আয় বাড়াতে ডিজিটাল পথে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া খুবই জরুরি।
সূত্র মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম বারের মতো রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আর চলতি অর্থবছর রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে ৫৮ বিলিয়ন ডলার। যা অর্জনে ডিজিটাল মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াতে পারলে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে সরকার। এ ছাড়া প্রায় দুই বছর ধরে চলা ডলার সংকট নিরসনেও কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে এটি কাজ করবে।