সপ্তাহে ৯ হাজার ৭০০ টাকা কিস্তির শর্তে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিনেছিলেন সাজদার হোসেন (৩৫)। অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় অটোরিকশা চালিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করছিলেন।
প্রতিদিনের মতো গতকাল শুক্রবার সকালে অটোরিকশা নিয়ে বের হন। দুপুরে একটি মসজিদের সামনে তালা দিয়ে অটোরিকশা রেখে জুমার নামাজ আদায় করতে যান। নামাজ শেষে একটু পর মসজিদ থেকে ফিরে এসে দেখেন তাঁর অটোরিকশাটি নেই, চুরি হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাজদার। এ ঘটনার এক দিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর কান্না থামছেই না।
সাজদার হোসেন নাটোরের লালপুর উপজেলার রহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল বেলা দেড়টার দিকে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মসজিদের সামনে থেকে তাঁর অটোরিকশাটি চুরি হয়ে যায়।
আজ শনিবার সকালে সাজদার হোসেন বলেন, দুই ছেলেমেয়েসহ চার সদস্যের পরিবার নিয়ে চরম অভাব-অনটনে কাটছিল তাঁর জীবন। আয়–উপার্জনের অন্য কোনো মাধ্যম না থাকায় একটি এনজিও থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অটোরিকশাটি কিনেছিলেন। নিজেই সারা দিন অটোরিকশা চালিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করছিলেন। কিস্তি পরিশোধ করে যা থাকত, তা দিয়েই কোনোরকমে সংসার চলত। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার টাকা কিস্তি শোধ করেছেন।
বাকি আছে আছে প্রায় লাখ টাকা। হঠাৎ অটোরিকশাটি চুরি হওয়ায় তাঁর আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে গেল। তিনি একেবারে পথে বসে গেলেন। এখন ছেলেমেয়েদের খাবার জোগাড় করার পাশাপাশি লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন। সাজদার হোসেন বলেন, অটোরিকশাটি তালা দিয়েই জুমার নামাজ আদায়ের জন্য গতকাল তিনি মসজিদে ঢুকেছিলেন। বেশিক্ষণ দেরিও করেননি। অথচ এর মধ্যেই চোর চক্র তালা খুলে অটোরিকশাটি নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা জায়গায় খুঁজেও তিনি গাড়িটি পাননি। ঘটনাস্থলের পাশেই লালপুর থানা। পুলিশের কাছে ঘটনাটি জানিয়েছেন। তারাও গাড়িটির সন্ধান পায়নি।
উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন অটোরিকশাটি চুরি হওয়ায় সাজদার হোসেন দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। চার সদস্যের পরিবার এখন কীভাবে চলবে, সেই ভাবনায় কিছুক্ষণ পরপর ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। অটোরিকশা হারানোর বেদনায় কান্নাই থামছে না তাঁর।
এ বিষয়ে লালপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম বলেন, হারিয়ে যাওয়া অটোরিকশাটির সন্ধান করছেন তাঁরা। একই সঙ্গে এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, সেটাও বের করার চেষ্টা চলছে।