শুরুতে বলা হয়েছিল বিশ্রামে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য সেটি এখন বেশিই লম্বা।এশিয়া কাপের ১৭ জনের স্কোয়াডে রাখা হয়নি। জায়গা পাননি রিজার্ভের তালিকায়ও। দেশের অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ার এখন কোন পথে, সেটি বেশ বড় প্রশ্নই ক্রিকেট অঙ্গনে।
রিয়াদকে এশিয়া কাপের দল থেকে বাদ দেওয়ার আগে ‘লম্বা আলোচনার’ কথা জানিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। বিশ্বকাপ দলেও তার জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোটায়। তাহলে কি শেষই হয়ে গেল রিয়াদের ক্যারিয়ার? তেমনটি অবশ্য মনে করছেন না সাবেক ক্রিকেটার ও বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন।
তিনি বলেন, ‘আমি এটা এখনই বলব না যে ওর শেষটা দেখছি। এখনও রিয়াদ একজন গুড ফাইটার। আমি মনে করি দলের কম্বিনেশন বা যে কারণেই বাদ পড়ুক না কেন তাতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই। এটা সত্যি কথা রিয়াদের বয়সও হচ্ছে। আমি এখনও বিশ্বাস করি রিয়াদ যেভাবে লড়াই করে চেষ্টা করে, তাতে শেষ হয়ে গেছে বলাটা ঠিক হবে না। সুযোগ আবার আসতেও পারে। ’
‘রিয়াদ এখনও বিসিবির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার। সুতরাং আমার মনে হয় রিয়াদ এখনও সেই স্পোর্টসম্যান স্পিরিটটাই রাখবে। নিজের সাথে লড়াই করবে এবং নিজের সাথে লড়াই করাটাই সবচেয়ে বড় লড়াই হবে। আমার মনে হয় ইটস টু আর্লি টু সে রিয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অয়ান্স ইউ আর এ ক্রিকেটার, ইউ আর এ ক্রিকেটার। রিয়াদ যতক্ষণ না পর্যন্ত বলছে ও শেষ করছে, ততক্ষন পর্যন্ত পাইপলাইনে সে অবশ্যই থাকবে। রিয়াদ বাংলাদেশে খেলার মতো যোগ্যতা অবশ্যই রাখে। ’
গত মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েন মাহমুদউল্লাহ। তখন টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাকে মূলত বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। পরে ইংল্যান্ড সফরের আয়ারল্যান্ড সিরিজ ও ঘরের মাঠে আফগানিস্তান সিরিজেও জায়গা মেলেনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তার রান ছিল ৩১, ৩২ ও ৮, আগের ভারতের বিপক্ষে সিরিজে রান ছিল ১৪, ৭৭ ও ২০।
রানের চেয়েও বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল রিয়াদের স্ট্রাইক রেট। এখনও সেটিই বড় প্রশ্ন। এ কারণে বিশ্বকাপ দলেও তার জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সুজন অবশ্য মনে করছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন রিয়াদ। তার আশা, ফিরলে পারফরম্যান্সের কারণেই ফিরবেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
তিনি বলেন, ‘কেউ খারাপ খেলুক, রিয়াদ ওখানে জায়গা করে নিক আমি এটাও বলছি না। আবার এটাও বলতে পারি না কেউ ইনজুরি আক্রান্ত হোক আর রিয়াদ ওখানে খেলুক। রিয়াদের যদি যোগ্যতা থাকে সে অবশ্যই সুযোগ করে নেবে। তবে আমি এটা বলতে চাই, বিশ্বকাপটাই রিয়াদের শেষ কেন। বিশ্বকাপ তো অক্টোবরে শেষ। এরপর তো অনেক ক্রিকেট আছে। রিয়াদ যদি ইয়ো ইয়ো টেস্টে ১৭.৬ পায়, তাহলে তো ও নিজেকে তৈরি করে আরও এক বছর চেষ্টা করতে পারে। ’
‘কোনো একটা বিশ্বকাপ আসুক, সেটা ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি.. কোনো ক্রিকেটার সুযোগ না পেলে আপনারা বলেন শেষ হয়ে গেল। রিয়াদ তো আর অন্য কিছু করে না, এটাই তার পেশা। আমার মনে হয় ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবে। আমার ক্যারিয়ারে আমি দশবার বাদ পড়েছি, দশবার ঢুকে গেছি। এটা ইস্যু বানানোর কিছু নাই। রিয়াদ গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। সুযোগ পায়নি। যে পেয়েছে, সে হয়ত এই মুহূর্তে কাজে লাগবে। ফেয়ার এনাফ.. তবে হ্যাঁ, রিয়াদের অভিজ্ঞতা যেটা আমাদের বর্তমান মিডল অর্ডারে কারো কাছে নেই। আমি মনে করি, অভিজ্ঞতা সবসময় বিবেচনা করা হয়। ’
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অবসর নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বেশ কয়েকটি। মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল হয়ে এখন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আছেন আলোচনায়। বয়স প্রায় ৩৮ হয়ে গেছে। ফর্ম ও ফিটনেস আগের মতো নেই, রিয়াদকে বাদ দিতে হয়েছে এশিয়া কাপের স্কোয়াড থেকেও। তবুও কেন খেলা ছেড়ে দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেন না তারা?
সুজন বলেন, ‘আমার তো ছিল। আমি তো মাঠ থেকেই বিদায় দিয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছি আমার সময় শেষ ইয়ংস্টাররা এসেছে। আমি যদি না ছাড়ি তাহলে নতুন মুখরা কীভাবে আসবে এটাও একটা বড় কথা। তো এটা প্লেয়ারদের ডিসিশন নিতে হবে। কোনটা রাইট সময় টু সে… এটা খুব কঠিন। কারণ আমিও ছিলাম ওই মুহূর্তটায়। কারণ খেলা ছাড়াটা ভালোবাসা ছেড়ে দিয়েছিলাম। রিয়াদদের মতো এতো পেশাদার ছিলাম না। এত টাকা পেতাম না। আমরা খুব অল্প টাকায় খেলেছিলাম। ওইটা তখন আমাদের ভালোবাসা ছিল। ’
‘পেশাদার ছিল না। আমাদের ভালোবাসা ছিল ক্রিকেটের মধ্যে। আমরা ছাড়তে পেরেছি। আমি জানি না কেন আমাদের এই প্রজন্মের ছেলেরা এটা ছাড়তে পায় না, কেন ভয় পায়। তবে একটা সময় ছাড়তে হবে। আকরাম ভাই ছেড়েছেন, নান্নু ভাই বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান ছিল ছেড়েছে, হাবিবুল বাশার এক সময়কার মিস্টার ফিফটি বলা হতো, বাংলাদেশের ক্যাপ্টেনসি করেছে রান করেছে অনেক। সবাই ছেড়েছে। ’
ক্রিকেট খেলুড়ে অন্য দেশগুলোতে ফর্মের চূড়ায় থেকে অবসর নেওয়ার দৃষ্টান্ত আছে অনেক। সর্বশেষ উদাহরণ হতে পারেন ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রড। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কেন খেলা ছাড়তে পারেন না? এ নিয়ে হতাশা ছিল সুজনের কণ্ঠে। অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত হলে বাদ পড়া নিয়েও প্রশ্ন তোলা উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি।
সুজন বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে মাঠ থেকে ছাড়ার যেমন আমরা অনেক উদাহরণ দেই অন্য টিম করে। আপনি কি বলেন স্টুয়ার্ড ব্রড এখনও ইংল্যান্ড টিমে খেলতে পারত না? ও ছাড়ল কেন? আমার কথা হচ্ছে এটাই ইউ হ্যাভ টু নো, হোয়েন ইউ ইউ হ্যাভ টু গিভ অ্যা ফুলস্টপ। এটা আপনাকে জানতে হবে। সুতরাং আমার মনে হয় যে উইথ অল রেসপেক্ট ট্যু দ্য প্লেয়ার্স আমি মনে করি এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা কেউ ফোর্স করতে পারব না। এই তোমার অবসর নেওয়ার বয়স হয়েছে এই কথাটা বলার রাইট আমাদের কারো নাই। দে উইল থিংক অ্যাবাউট দেন। আসলে আমার রিটায়ার করা উচিত না আমার খেলা উচিত। ’
‘যদি মনে করে না আমার আরও খেলা উচিত আমি আরও দুই তিন বছর খেলব- ফাইন এনাফ। কেউ… আপনি এটা বলতে পারবে না কেউ বাদ দিতে পারবে না। তাহলে এটা যাবে না, আমাকে বাদ দিতে পারবে না। আপনি বাদ পড়তে পারেন, আপনার ফর্ম আপনার সবকিছু বিবেচনা করলে। আপনার জায়গায় অন্য ছেলেকে সুযোগ দিতে পারে। আসলে এইগুলা না অনেক ডিবেটের ব্যাপার আছে বাট আমি একটু আগেও বলেছি আমি সব সময় বলি একটা সময় এক্সপেরিয়েন্সের মূল্য অবশ্যই অনেক বেশি। বাট এটাও অনেক ইম্পর্ট্যান্ট যে ফ্রেশ লেগস না আসলে একটা টিম বিল্ডআপের পজিশনে আমরা না গেলেও কিন্তু হবেও না। ’