চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল। এখন সব মিলিয়ে ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকার চেয়ে বাইরে শুধু রোগী নয়, বাড়ছে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যাও।
দেশের বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসুবিধার বেশির ভাগই ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়াকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে আমাদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দুর্বল নয়। কিন্তু ডেঙ্গুর চিকিৎসায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়নি। এতে সেখানে রোগী বাড়ছে। আর তাঁরা দ্রুত বেশি মাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
গত ২১ অক্টোবর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকা নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর এ সময় ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ৮১ জন।
দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনেরই মৃত্যু হয়েছে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে। এ নিয়ে চলতি বছর এডিস মশাবাহিত এই রোগে ১ হাজার ৩৮০ জনের মৃত্যু হলো।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গত বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে শুক্রবার সকাল আটটা) ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৫৭ জন।
দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ৩৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। আর গত মাসে মারা গেছেন ৩৫৯ জন। এর আগে আগস্টে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ৩৪২ জনের। দেশে চলতি বছর মার্চ মাস ছাড়া সব মাসেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু দেখেছে দেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ২ লাখ ৭৬ হাজার ১৬৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ লাখ ৩৮৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭৬ জন ভর্তি হন।
দেশে বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় ২০০০ সালে। ওই বছর মারা যান ৯৩ জন। করোনা মহামারির আগের বছর ২০১৯ সালে বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ওই বছর ডেঙ্গুতে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৮৬৮ জন। এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।