মেয়রের আল্টিমেটামে এক চুলও নড়েননি হকাররা

0
50

ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে থাকা সিলেট নগরীর ফুটপাত হকারমুক্ত করার সিটি মেয়রের এক মাসের আল্টিমেটাম শেষ হলেও এক চুল পরিমাণ নড়েননি হকাররা। এমনকি খোঁদ নগর ভবনের সামনের অংশও হকারমুক্ত হয়নি। উল্টো দাপট দেখিয়ে প্রতিদিন বিকেল থেকেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এতে করে সিলেট নগরীর প্রধান সমস্যা হকার উচ্ছেদ নিয়ে শঙ্কা থেকেই গেছে।

গত ১৬ জানুয়ারি সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের কনফারেন্স হলে নবনির্বাচিত এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হকার উচ্ছেদে এক মাসের আল্টিমেটাম দেন সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মেয়রের আল্টিমেটামের সময় শেষ হয়েছে। এদিন ছুটির দিন থাকায় সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার-বন্দরবাজার হকারদের দখলে ছিল। এমনকি কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় নগর ভবনের সামনের অংশজুড়েও ছিল হকারদের ভিড়।

সিলেট নগরীর প্রধান সমস্যা হকার। সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান থেকে শুরু করে আরিফুল হক চৌধুরীর সময়েও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ হকার উচ্ছেদ। কিন্তু কেউই সমাধান করতে পারেননি। অবশ্য আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর লালদিঘীর পাড়ে ‘হলিডে’ মার্কেট চালু করেছিলেন। সেখানে হকাররাও গিয়েছিলেন। পরে ধীরে ধীরে তারা চলে আসেন সড়কের ওপর। আরিফের দায়িত্ব পালনের শেষ সময় থেকে ফের ফুটপাত দখলে নেন হকাররা। বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের নির্বাচনী ইশতেহারেও হকার উচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আগের তুলনায় হকারের সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।

নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টার বিভিন্ন সড়কে ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কের অর্ধেক অংশ হকারদের দখলে। ভ্রাম্যমাণ কাপড় বিক্রেতা ছাড়াও মাছ ও সবজি বিক্রেতারাও এখন নগরীর সড়কে সড়কে। খোদ নগরভবনের সামনের অংশ সবজি ও মাছ বিক্রেতারা দখল করে রেখেছেন।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রয়ারি) জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের দু’পাশে শত শত হকার কাপড়ের পসরা মেলে রেখেছেন। শুক্রবার ছুটির দিনও সড়কের অর্ধেক অংশ হকারদের দখলে। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সুযোগ না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন ঘেঁষে হাঁটছেন পথচারীরা। এছাড়া নগর ভবনের সামনের অংশ থেকে প্রধান ডাকঘর পর্যন্ত সবজি বিক্রেতা ও মাছ ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছেন। প্রতিদিন দুপুর গড়ালেই ফুটপাত চলে যায় হকারদের দখলে। মধ্যরাত পর্যন্ত হয় বিকিকিনি।

অভিযোগ রয়েছে, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মচারী, কতিপয় পুলিশ সদস্যরা টাকা নিয়ে ফুটপাথে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেন। যার কারণে ফুটপাথে বসে যারা ব্যবসা করেন, তারা সন্ধ্যায় বিদ্যুতের আলোরও সুবিধা পান। বিশেষ একটি মহল এই ব্যবস্থা করে দেয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে নেওয়া হয় টাকা।

এ অবস্থায় গত ১৬ জানুয়ারি সিলেটের ব্যবসায়ীরা একটি অনুষ্ঠানে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কাছে হকার সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরেন। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করে হুমকির মুখে রয়েছেন বলেও মেয়রকে অবগত করেন। জবাবে এক মাসের মধ্যে হকার উচ্ছেদ করবেন বলে জানান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

মেয়রের এ আল্টিমেটামের পর সিলেট নগরীর কোথাও হকার উচ্ছেদ অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি। অবশ্য গত ৪ ফেব্রুয়ারি নানা বিষয় নিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন খানের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সভায় হকার উচ্ছেদ ছাড়াও যানজট নিরসন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ, সিসি ক্যামেরা ও পুলিশ বক্স স্থাপনসহ জনগুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করলে তিনি সাড়া দেননি।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, যানজট নিরসন ও হকারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সিসিকের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। হকার উচ্ছেদের বিষয়টি আমাদের না। তবে সড়কে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে সে হকার হোক আর যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মেয়র কোনো আল্টিমেটাম দিলে সেটা তার বিষয়। তবে সিটি করপোরেশন আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here