ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে ভাঙচুর করা সুশান্ত কুমার দাসকে (৬৫) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোমবার (১৩ মে) বিকেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হেল্প ডেস্ক ভাঙচুর করেন সুশান্ত কুমার দাস। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
সুশান্ত কুমার দাস ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর এলাকার হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা। হঠাৎ তার এমন কর্মকাণ্ডে হতবাক এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় সুশান্ত অত্যন্ত ভদ্র হিসেবে পরিচিত। তিনি কখনো গ্রামের কোনো মানুষকে কোনো ধরনের গালি বা কটু কথা বলেননি। হঠাৎ সুশান্তের কী হলো যে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভাঙচুর করলেন- এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
কথা হয় সুশান্তের প্রতিবেশী অঞ্জন কুমারের সঙ্গে। তিনি বলেন, সুশান্তকে আমি ছোটকাল থেকে দেখতেছি, তিনি অত্যন্ত ভদ্র-শান্ত একজন মানুষ। তিনি কখনো কারও সঙ্গে ঝগড়া করেন না। কেন হঠাৎ করে তিনি ডিসি অফিসে ভাঙচুর করলেন। বিষয়টি আমরা কেউ বুঝে উঠতে পারছি না। এত শান্ত একজন মানুষ কেন এমন কাজ করলেন।
অঞ্জন কুমার বলেন, শুনতেছি তিনি নাকি ডিসি অফিসে অনেক দিন ধরে কীসের জমির কাগজ নিয়ে ঘুরছিলেন। যখন কাজ হয়নি তখন রাগান্বিত হয়ে তিনি এ কাজ করেন ।
রাতের বেলায় সুশান্তের বাড়ির পাশের দোকানে কথা হচ্ছিল এলাকাবাসীদের মধ্যে। চায়ের দোকানে বসে থাকা সুশান্তের প্রতিবেশী সুশান্ত কুমার রায় বলেন, সুশান্ত একজন ভদ্র-শান্ত প্রকৃতির মানুষ। আমার নামও সুশান্ত, তার নামও সুশান্ত। তবে তিনি এলাকায় বাবু নামে পরিচিত। আমাদের হিন্দু ধর্মের মধ্যে বাবু নাম তাদেরকে দেওয়া হয় যারা একটু ভদ্র এবং সমাজে নেতা টাইপের হয়ে থাকে। তাকে আমরা সুশান্ত নামে কেউ চিনি না তেমন। সবাই তাকে বাবু বলে। তিনি গ্রামের সবচাইতে মুরব্বি একজন মানুষ। তিনি গ্রামের সবার কাছে একজন প্রিয় ব্যক্তি। সবাই তাকে খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখে। তিনি অত্যন্ত ভদ্র মানুষ। হঠাৎ করে তিনি কেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভাঙচুর করলেন বুঝতে পারছি না।
সুশান্তের বড় ছেলে জয় কুমার দাস বলেন, আমার বাবা একজন ভদ্র-শান্ত স্বভাবের ব্যক্তি। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ডিসি অফিসে জমির কাগজ নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিলেন। এতটুকু আমরা জানি। আজকে কেন তিনি ডিসি অফিসে গিয়েছিলেন সেটা আমরা কেউ জানি না। তিনি বাড়ি থেকে এটা আমাদেরকে বলে যাননি। তবে বেশ কিছুদিন ধরে আমার বাবার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। স্বাভাবিক থেকে একটু অন্য প্রকৃতির হয়ে গিয়েছিল। আমরা মনে করি তার মানসিক সমস্যার কারণে এ রকম হতে পারে।
এ বিষয়ে রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হাসান মো. আব্দুল হান্নান (হান্নু) বলেন, সুশান্ত আমাদের ইউনিয়নের মধ্যে একজন পরিচিত ব্যক্তি এবং সবাই তাকে শান্ত স্বভাবের হিসেবে চেনে। কোনো দিন তাকে কারো সঙ্গে ঝগড়া করতে বা কোন খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। অনেকেই বলতেছে যে সে নাকি পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি পাগল না। তিনি একজন ভদ্র নম্র ভালো মানুষ। তিনি কোনো ধরনের খারাপ কাজ করেন না। আজকে শুনছি যে ডিসি অফিস ভাঙচুর করেছেন। তিনি কী কারণে এমনটা করেছেন সেটা সঠিক তদন্ত করে বের করা হোক।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গোপনীয় শাখার অফিস সহকারী মামুনুর রশিদ বলেন, হেল্প ডেস্কের কাজ হলো জেলা প্রশাসকের নিকট আসা সকল আবেদন গ্রহণ করে রিসিভ কপি দেওয়া। পরে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সেই আবেদনের ওপর কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে হেল্প ডেস্ক থেকে কোনো কাজ করে নেওয়ার সুযোগ নেই ।
ঠাকুরগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন, আটক সুশান্ত কুমার দাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি পরিকল্পিতভাবে বাড়ি থেকে লোহার রড এনে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করায় তার নামে মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে আমরা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমার জানা মতে তার সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ডিসি অফিসের কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেনি বা দীর্ঘদিন তিনি ঘুরছেন এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে তিনি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন, সেখানে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। আমার জানা মতে শুধু আমাদের সঙ্গে তার একটি সম্পর্কই রয়েছে সেটি হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। তার সেই প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল এতোটুকুই তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেবা পাওয়া যায় না- এমন তথ্য সঠিক নয়। কারণ তথ্যকেন্দ্র তেমন কোনো ধরনের সেবা দেয় না। তারা শুধু কোথায় যেতে হবে সেই দিকনির্দেশনাটা দিয়ে থাকে।