দুদকে আসেননি বেনজীর, পাঠিয়েছেন ব্যাখ্যা

0
26

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফায় গতকাল তলব করা হলেও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হননি তিনি। তবে আইনজীবীর মাধ্যমে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন। এ বক্তব্য আমলে নেওয়া হবে কিনা- সে সম্পর্কে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

দুদক সচিব বলেন, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বেনজীরের বক্তব্য প্রদানের জন্য আজ (গতকাল) দিন নির্ধারণ ছিল। কিন্তু তিনি যথাসময়ে উপস্থিত হবেন কিনা সে বিষয়ে কমিশনকে কিছু জানাননি বা অবগত করাননি। আজকে (গতকাল) অফিস সময়ের মধ্যে কমিশনে উপস্থিত হয়ে তার বক্তব্য প্রদান না করলে অনুসন্ধান টিম আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এদিকে আজ সোমবার বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল দুদক সচিব বলেন, সোমবার তার স্ত্রী ও কন্যাদের উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুসন্ধানকারী টিম নোটিশ প্রদান করেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা উপস্থিত না হলে অনুসন্ধান টিম আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

খোরশেদা ইয়াসমীন আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ কমিশনে আইনজীবীর মাধ্যমে একটি চিঠি দিয়েছেন। এতে তার, তার স্ত্রীর ও দুই মেয়ের নামে থাকা সম্পদ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। চিঠিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কোনো সময় চাওয়া হয়নি। এদিকে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, লিখিত চিঠিতে বেনজীর আহমেদের দাবি, তার নিজের ও স্ত্রী-সন্তানের নামে কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। তার নিজের ও পরিবারের নামে যেসব সম্পদ রয়েছে তা বৈধ পন্থায় অর্জন করা হয়েছে। এসব সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র তার কাছে রয়েছে বলে চিঠিতে দাবি করা হয়েছে।

গত ৩১ মার্চ ও ৩ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে গত ১৮ এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

বেনজীরের বিরুদ্ধে দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান শুরু করার পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি দেশ ছেড়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। এরপরই গত ৬ জুন বেনজীরকে এবং ৯ জুন তার স্ত্রী জীশান মীর্জা ও দুই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রথম দফায় তলব করে দুদক। সে সময় বেনজীরের পক্ষে তার আইনজীবী সময় চেয়ে দুদকে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয়বারের মতো সময় দেয় দুদক। সেই মোতাবেক গতকাল দুদকে হাজির হওয়ার কথা ছিল তার।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তিন মেয়ের নামে ২০৫টি দলিলে ৭০২ বিঘা জমি (৩৩ শতকে এক বিঘা হিসাবে), ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ২৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে বলে সন্ধান পায় দুদক। এরপর গত ২৩ ও ২৬ মে এবং ১২ জুন আদালতের নির্দেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়। ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এসব সম্পত্তি গড়েছেন তিনি।

দুদকের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম এ অনুসন্ধান করছে। টিমের অপর দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী এবং মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।

বেনজীর আহমেদ ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। এরপর ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী অবসরে যান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here