বান্দরবানে কেএনএ’র গুলিবর্ষণে এক সেনাসদস্য নিহত, আহত ২

0
263

বান্দরবানের রুয়াংছড়ির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে সেনাবাহিনীর টহল দলের উপর কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি এর অতর্কিত গুলিবর্ষণে নিহত এক এবং আহত দুই সেনাসদস্য।

সোমবার (১৩ মার্চ )বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় মা ও শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে গমনকৃত দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাসদস্যদের উপর গতকাল সোমবার (১২-০৩-২০২৩) আনুমানিক বেলা ১টায় কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) এর সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এবং দুই জন সেনা সদস্য আহত হয়। আহত দুই সেনাসদস্য বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন বিগত ৩০ বছর যাবৎ অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা এবং পেশাদারিত্বের সাথে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর পিতার নাম মৃত শমসের আলী। তিনি রংপুর সদরের ঘাঘটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। দেশ মাতৃকার সেবায় তাঁর এই মৃত্যুতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, এসবিপি (বার), ওএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, পিএইচডি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি নামক এই সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি ইতোপূর্বে “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’ এর মত একটি জঙ্গী গোষ্ঠীকেও বান্দরবানের পাহাড়ী এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। পাহাড়ী এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সরকার কর্তৃক নির্মিতব্য বান্দরবানের থানচি সড়ক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এই উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে প্রতিহত করার জন্য কেএনএ সন্ত্রাসী দলটি সড়ক নির্মাণ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত অসামরিক ঠিকাদার, মালামাল সরবরাহকারী এবং শ্রমিকদের নিকট থেকে প্রথমে চাঁদা দাবী করে ও পরবর্তীতে কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই কাজ চলমান থাকায় কেএনএ সন্ত্রাসী দল গত ১১ মার্চ ২০২৩ তারিখে ১২ জন শ্রমিককে অপহরণ করে। এদের মধ্যে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয় এবং চার জন শ্রমিককে এখনও কেএনএ জিম্মি করে রেখেছে। অবশিষ্ট সাত জন শ্রমিককে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিলেও তাদেরকে সেনাবাহিনীর সাথে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করার জন্য হুমকি প্রদান করে এবং কেএনএ ১২ মার্চ ২০২৩ তারিখে সেনাবাহিনীর টহল দলের উপর গুলিবর্ষণ করে।

উল্লেখ্য, গত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে বান্দরবানের তিন উপজেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য কেএনএ পরিবহন মালিক সমিতিকে হুমকি প্রদান করে নোটিশ জারি করে। কেএনএ সদস্যদের বিবিধ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দ্বারা সৃষ্ট নিরাপত্তাজনিত কারণে গত রোববার (১২ মার্চ ২০২৩) উক্ত এলাকায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও কেএনএ এর নির্যাতনে স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়ী সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী ঘরছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। কেএনএ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, মাদকের চোরাচালান, অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকান্ডের কারণে বর্তমান সরকারের বিবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড, বেসরকারি বিনিয়োগ ও পর্যটন শিল্প বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে, যার সূদুরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। কেএনএ এর এই অপতৎপরতা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে এবং সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিঘ্নিত করছে।

এসএএ/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here