জাতীয় বার্ণে টেন্ডার-ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ, নেপথ্যে হিসাবরক্ষক সুলতান

0
23

জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ক্ষমতার অপব্যবহার,শত কোটি টাকার ঘুষ ও টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো.সুলতান নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তার এ সব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব বরাবর এম এ মান্নান খান নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ দিয়েছেন।


অভিযোগে ওই ব্যক্তি লিখেন,এক সময় ১২০০ টাকা স্কেলের ক্যাশিয়ার হিসেবে চাকরি শুরু করা এই কর্মকর্তা এখন ঢাকার অভিজাত এলাকায় বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট এবং জমির মালিক। উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন—এই বিপুল সম্পদ তিনি কীভাবে অর্জন করলেন?

সুলতান নাসির উদ্দিন ১৯৯৮ সালে ডিজি অফিসের একটি প্রকল্পে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ২০১৬ সালে জাতীয় ইএনটি ইনস্টিটিউট থেকে জাতীয় বার্ণ ইনস্টিটিউটে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন পান। অভিযোগ রয়েছে,সরকারি নিয়োগ ও পদোন্নতির নীতিমালা লঙ্ঘন করে নিজ পদকে ‘অ্যাকাউন্ট অফিসার’ হিসেবে রেগুলার করেন এবং পরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে টেন্ডার সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে জড়িয়ে পড়েন।

বিশ্বস্ত সূত্র মতে, তিনি বার্ণ ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন টেন্ডারে আগ্রহী ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১০-২০ শতাংশ ঘুষ নিয়ে কাজ বরাদ্দ করতেন। এমনকি অনেক সময় সর্বোচ্চ দরদাতাকে প্রভাবিত করে নির্বাচিত করতেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ঘুষের বিনিময়ে বিড সিকিউরিটি ও পারফরম্যান্স সিকিউরিটির জাল কাগজপত্রও সরবরাহ করতেন।

তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অন্য একটি গুরুতর অভিযোগ হলো, নিজের স্ত্রীর নামে জাতীয় ইএনটি ইনস্টিটিউটে অবৈধভাবে রিসেপশনিস্ট পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়া। নিয়োগ ফাইলে স্বাক্ষরকারী হিসেবে নিজের অবস্থানকে ব্যবহার করে এই কাজটি করেন বলে অভিযোগ সূত্র জানায়।

সম্প্রতি বদলি হওয়া ইনস্টিটিউটের সাবেক সহকারী পরিচালক ডা.হোসাইন ইমামের সঙ্গে সুলতানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। তারা ২ জন মিলে একটি ‘অফলাইন টেন্ডার সিন্ডিকেট’ চালাতেন, যা সরকারি ই-জিপি প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে পরিচালিত হতো। এখনও সুলতান নাসির এই পুরনো সিন্ডিকেটকে সচল রাখার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ।

এদিকে তাঁর বিরুদ্ধে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজধানীর পূর্ব বাড্ডায় পাঁচতলা বাড়ি, প্রগতি সরণিতে প্রায় ৪ কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল গাড়ি, জামালপুরে পৈত্রিক ভিটায় সুরম্য বাড়ি ও ৫০-৬০ বিঘা জমির মালিকানা—এসব তাঁর প্রকৃত আয় থেকে স্পষ্টতই বেমানান।

সুলতান নাসির উদ্দিনের HRIS বায়োডাটায় তাঁর চাকরিজীবনের ACR সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই, এমনকি শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রেও শুধু এসএসসি পাস উল্লেখ করা হয়েছে। এতে করে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।

এইসব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে-স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জাতীয় বার্ণ ইনস্টিটিউটে ই-জিপি ক্রয় প্রক্রিয়া কার্যকর ও দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুলতান নাসির উদ্দিন বলেন, এখানে যেসব অভিযোগের কথা বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি ছোট চাকরি করি।এখানে যে বাড্ডায় বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে আমরা বেশ কয়েকজন মিলে শেয়ারে একটি বাড়ি বানিয়েছি।বর্তমানে ওই ফ্লাটে থাকছি। অন্যান্য যেসব গাড়ি ফ্ল্যাট কয়েক বিঘা জায়গার কথা বলা হয়েছে এমন কোন কিছু নেই। সবকিছু মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার স্ত্রী ইএনটিতে রিসিপশনিস্ট পদে চাকরি করে এটি ঠিক আছে। আমার এক ছেলের সাদমান সুলতান ও মেয়ে নাফিসা সুলতানা। আমার মেয়ে নাফিজা সুলতানা আহসানুল্লাহ ইউনিভার্সিটি তে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছে এবং ছেলে সাদমান সুলতান বনশ্রী আইডিয়ালে পড়ে।

আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে টেন্ডার থেকে ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমিশন নেন সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কোন টেন্ডারে ঠিকাদারের কাছ থেকে কোন কমিশন বা ঘুষ নেই না। এজি অফিসে বিল পাস করার জন্য তাদের ওখানে খরচ দিতে হয় এবং বিল পাস হওয়ার পরে তারা আমাদের অফিসে কিছু খরচ দেয় এ ছাড়া অন্য কোন টাকা আমরা নেই না।

হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সুলতান নাসির উদ্দিনের অভিযোগের বিষয়ে জানেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, আমি এখন পর্যন্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের টেন্ডার ও ঘুষ বাণিজ্যের কোন অভিযোগ অফিসিয়ালি আমি এখনো পাইনি।আমার এখানে যদি কোন অভিযোগ আসে সে বিষয়টি জানার সাথে সাথে আমি একটি তদন্ত কমিটি করে দেই। যদি এমন কোন অভিযোগ পাই তাহলে অবশ্যই সে বিষয়টি তদন্ত করা হবে।

টেন্ডার ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে ১০ থেকে ২০ কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে এ বিষয়ে আপনি কিছু জানেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন আমি আসার পরে এমন কোন ঘটনার বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি এখানে মাত্র দুই মাস বসেছি।আগে যদি কিছু করে থাকে সে বিষয়টি আমার জানা নেই। যারা অফিসে কাজ করে এখানে আসার আগে অনেক কিছুই শুনেছি।একজন কেরানি যদি টেন্ডার থেকে ১০ থেকে ২০ পার্সেন্ট নিয়ে যায় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান আর টেকার কোন সুযোগ থাকে না।যেহেতু টেন্ডার প্রক্রিয়াটা তিনি (সুলতান) দীর্ঘদিন যাবৎ করেন সে আসলে বিষয়টি বুঝে। যেহেতু টেন্ডারের কাজ সে করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে পারে কিন্তু অভিযোগ কতটুকু সত্য সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। আমি দুই মাস এসেছি এখন পর্যন্ত কিছু পাইনি আগে কি হয়েছে না হয়েছে সে বিষয়টি আমি জানিনা। আমি যদি জানতে পারি সে এই ঘটনার সাথে জড়িত তাহলে তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন,হিসাবরক্ষক সুলতান নাসির উদ্দিন আমাকে জানান তাকে এখান থেকে যেন অন্যত্র বদলি করে দেই।কেন তিনি বদলি হতে চান সে বিষয়টি জানতে চাইলে হিসাবরক্ষক সুলতান বলেন স্যার আমার নামে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির টেন্ডার বাণিজ্যের কথা শুনতে পাচ্ছি।আমার ছেলে মেয়ে আছে মান ইজ্জত থাকতে চলে যাওয়াই ভালো।আমি এটার সাথে আর জড়িত থাকতে চাই না।

টেন্ডারের ইজিপির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি আসার পরে কয়েকদিন আগে কয়েকটি আইটেম টেন্ডার হয়েছে। তবে দক্ষ জনবল না থাকায় ইজিপি প্রক্রিয়ায় টেন্ডার করা সম্ভব হয়নি।আমরা চেষ্টা করছি আগামীতে যেন ইজিপির মাধ্যমে টেন্ডার করা যায়। এই টেন্ডার দ্রুত না করলে হাসপাতালে রোগীদের জন্য ওষুধ সহ বিভিন্ন জিনিস সাপ্লাই দেওয়া সম্ভব হবে না।

বিএন//এসএএ//

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here