অভাবের সংসারে একের পর এক সন্তান দত্তক দিচ্ছেন বাবা-মা

0
42

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা সন্তানকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে মো. শফিকুল ইসলাম (৩২) ও মরিয়ম বেগম (২৮) দম্পতির বিরুদ্ধে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা। তাদের দাবি, অভাবের সংসারে ভরণপোষণ দিতে না পারায় তারা সন্তান দত্তক দিচ্ছেন।

এর আগেও ওই দম্পতি কোলের সন্তানকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ উঠলেও প্রতিবেশী ও স্বজনদের কাছে দত্তক দিয়েছেন বলে দাবি করেন তারা।

শফিকুল ইসলাম ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের গনাইরকুটি গ্রামের মো. মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। তিনি ৫ সন্তানের জনক। বর্তমানে তাদের ঘরে তিন সন্তান থাকলেও দুই সন্তানকে অভাবের তাড়নায় প্রতিবেশীর কাছে দত্তক দিয়েছেন বলে জানান এই দম্পতি।

স্থানীয়রা জানান, শফিক ইসলাম একজন পাথরভাঙা শ্রমিক। নিজের অর্থ সম্পদ বলতে কিছু নেই। অন্যের বাড়িতে বসবাস করেন। ১৩ বছর আগে নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের মরিয়ম বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পরের বছর তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান আসে, নাম রাখেন মফিজুল ইসলাম। পরের বছর দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে জান্নাতের জন্ম হয়। এরপর মরিয়ম টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।

পরবর্তীতে তৃতীয় সন্তান মেয়ের জন্ম হলে প্রতিবেশী আকলিমার মাধ্যমে অপরিচিত মানুষের কাছে তুলে দেন। পরের বছর আরেকটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হলে তাকে ঘরে রাখলেও এখন পর্যন্ত কোনো নামই রাখেননি তারা। এরপর পঞ্চম সন্তান মুক্তি জন্ম নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী মামাতো বোন নিঃসন্তান লাকী বেগম ও আলমগীর দম্পতিকে দিয়ে দেন।

লাকী ও আলমগীর দম্পতির বাড়ি ভূরুঙ্গামরী সদর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে। তবে এই দম্পতি ঢাকায় পোশাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন বলে নিশ্চিত করেছেন লাকী বেগমের বাবা আকবর আলী।

প্রতিবেশী মামাতো বোনের কাছে সন্তানকে বিক্রি করার ঘটনাটি অস্বীকার করে শফিকুল ইসলাম বলেন, টাকা নিয়ে আমার সন্তানকে আমি অন্যের কাছে বিক্রি করিনি। অভাবের সংসারে এতগুলো সন্তানের ভরণপোষণ করতে পারবো না বলে দত্তক দিয়েছি। যাতে আমার সন্তানরা অন্যের হাতে ভালো থাকে। বুকের ধনকে অন্যর হাতে তুলে দিয়েছি। এর আগেও আরেক মেয়েকে অন্যের কাছে দিয়েছি। তার খোঁজ খবর জানি না। বলতে পারেন অভাবের কারণেই এই পথে হাঁটা।

মরিয়ম বেগম বলেন, সংসারে অভাব অনটনের জন্য মেয়েকে অন্যের কাছে দিয়েছি।

শিশুকে দত্তক নেওয়া আলমগীর হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, আমরা নিঃসন্তান হওয়ায় শিশুটিকে দত্তক নিয়েছি। টাকা পয়সা দিয়ে কিনে নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মনোয়ার হোসেন জানান, পূর্বে একটি সন্তান দত্তক দেওয়ার কথা জেনেছি। আজকের তথ্য আমার জানা নেই। তবে লোকটা অভাবী বলে জানি।

ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস বলেন, সন্তান বিক্রি বা দত্তক দেওয়ার ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নেবেন বলে জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here