কিয়ামতের দিন সূর্য কতটা ভয়াবহ হবে

0
97

গত কয়েক দিনের দাবদাহে অস্থির দেশবাসী। সূর্যের অসহনীয় তাপ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে অনেকে বলে বসেন, সূর্যিমামা প্রচণ্ড রেগে আছে। মূলত সূর্য মহান আল্লাহর একটি মাখলুক মাত্র। সে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনে নিয়োজিত।

আল্লাহর আদেশ ছাড়া সূর্যের কোনো ক্ষমতা নেই, আলো ছড়ানো কিংবা জনপদে উত্তাপ ছড়ানোর। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে এবং সূর্য ও চাঁদকে এবং তারকাসমূহও তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। নিশ্চয়ই এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য যারা বুঝে।’ (সুরা নাহাল, আয়াত : ১২)

মহান আল্লাহর এই নিদর্শন আমাদের দিন ও মাসের হিসাব রাখতে সহযোগিতা করে।মানুষের দৈনন্দিন কাজেও সূর্যের উপকারিতা অপরিসীম। সূর্যের আলো থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ডি মানুষের ত্বক, দাঁত, হাড়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, নার্ভ সিস্টেম ও মস্তিষ্কের জন্যও বেশ উপকারী। আবার এই সূর্য দিয়েই মহান আল্লাহ চাইলে মানুষকে শাস্তি দিতে পারেন। এ জন্যই মহানবী (সা.) সূর্যের প্রচণ্ড তাপকে জাহান্নামের উত্তাপের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

(বুখারি, হাদিস : ৫৩৮)

এমনকি কিয়ামতের ময়দানে সূর্য মানুষের এত কাছাকাছি চলে আসবে যে কেউ তাদের ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন মানুষের ঘাম ঝরবে। এমনকি তাদের ঘাম জমিনে সত্তর হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এবং তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে; এমনকি কান পর্যন্ত। (বুখারি, হাদিস : ৬৫৩২)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, মিকদাদ (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামত দিবসে সূর্যকে মানুষের এত কাছে আনা হবে যে তা মাত্র এক অথবা দুই মাইল ব্যবধানে থাকবে। সুলাইম ইবনু আমির (রহ.) বলেন, আমি জানি না উক্ত মাইল দ্বারা জমিনের দূরত্ব জ্ঞাপক মাইল বোঝানো হয়েছে, না চোখের সুরমা লাগানোর শলাকা বোঝানো হয়েছে।

তিনি বলেন, সূর্য তাদের গলিয়ে দেবে। তারা তখন নিজেদের আমল (গুনাহ) অনুপাতে ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে। আর তা কারো পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো মুখ পর্যন্ত ঘাম পৌঁছে লাগামের মতো বেষ্টন করবে। এই কথা বলার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাত দ্বারা মুখের দিকে ইশারা করেন, অর্থাৎ লাগামের মতো বেষ্টন করাকে বোঝালেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২১)

অর্থাৎ সেদিন সূর্যকে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসার কারণে তার তাপ কিছু মানুষকে গলিয়ে দেওয়ার অবস্থা করবে। যারা নেককার বান্দা হবে, তাদের সেদিন কোনো কষ্ট হবে না। কিন্তু যারা বদকার, তারা তাদের পাপ অনুযায়ী সেদিন সূর্যের তাপে কষ্ট পেতে থাকবে। ফলে তাদের কারো কারো ঘাম গোড়ালি পর্যন্ত থাকবে, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত, কারো মুখ পর্যন্ত।

বুখারি শরিফের অন্য একটি দীর্ঘ হাদিস দ্বারা জানা যায়, মানুষ এই কঠিন পরিস্থিতিতে অসহ্য হয়ে নবীদের কাছে ছুটবে, যে তাঁরা যেন মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে সবাইকে একটি কঠিন মুহূর্ত থেকে উদ্ধার করে। যাতে তাড়াতাড়ি বিচারকার্য শুরু হয়। কিন্তু কোনো নবীই মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার সাহস করবেন না। শেষ পর্যন্ত তারা শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মদ (সা.), আপনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ তাআলা আপনার আগের, পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কিসের মধ্যে আছি? তখন তিনি আরশের নিচে এসে তাঁর রবের সামনে সিজদায় পড়ে যাবেন। তারপর আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রশংসা ও গুণগানের এমন সুন্দর নিয়ম তাঁর সামনে খুলে দেবেন, যা এর পূর্বে অন্য কারো জন্য খোলেননি। এরপর বলা হবে, হে মুহাম্মদ (সা.), তোমার মাথা ওঠাও। তুমি যা চাও, তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি সুপারিশ করো, তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে। এরপর নবীজি (সা.) আমার মাথা উঠিয়ে বলবেন, হে আমার রব, আমার উম্মত। হে আমার রব, আমার উম্মত। হে আমার রব, আমার উম্মত। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ (সা.), আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের কোনো হিসাব-নিকাশ হবে না, তাদের জান্নাতের দরজাসমূহের ডান পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। এ দরজা ছাড়া অন্যদের সঙ্গে অন্য দরজায়ও তাদের প্রবেশের অধিকার থাকবে। তারপর তিনি বলবেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সে সত্তার শপথ! জান্নাতের এক দরজার দুই পাশের মধ্যবর্তী স্থানের প্রশ্বস্ততা যেমন মক্কা ও হামিরের মধ্যবর্তী দূরত্ব, অথবা মক্কা ও বসরার মাঝে দূরত্বের সমতুল্য। (বুখারি, হাদিস : ৪৭২১ অবলম্বনে)

এভাবেই সেদিন নবীজি (সা.)-এর সুপারিশে মানুষ কিয়ামতের বিচার পূর্ববর্তী ভয়াবহ অবস্থা থেকে নিস্তার পাবে। তাই আমাদের উচিত, এই দুনিয়ার দাবদাহ থেকে উপলব্ধি করা করা যে কোটি কোটি মাইল দূরের সূর্যের তাপে যদি আমাদের এই বেহাল হয়, তাহলে কাল কিয়ামতের দিন কতটা ভয়াবহ হবে! অতএব আমাদের উচিত, মহান আল্লাহর কাছে সমস্ত পাপ থেকে তাওবা করা, নবীজি (সা.)-এর সুন্নতগুলো যত্নসহকারে আদায় করা। ইনশাআল্লাহ এর বিনিময়ে আমাদের ইহকাল-পরকাল শান্তিময় হবে, নিশ্চিন্ত হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here