চলতি অর্থবছরের ব্যাংকগুলোকে কৃষি খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের নির্দেশ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা।
রোববার নতুন অর্থবছরের জন্য এমন নির্দেশনা দিয়ে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা এবং কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ। নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খান।
এ সময় কৃষি ঋণ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক নুরুল আমীন, পরিচালক কানিজ ফাতেমাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরাও উপস্থিত ছিলেন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে নতুন করে বেশকিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন কৃষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। পল্লী অঞ্চলে আয়-উৎসারী কর্মকাণ্ডে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা হবে ৫ লাখ টাকা। ছাদ কৃষিতে অর্থায়ন করতে পারবে ব্যাংক। অর্থাৎ বাড়ির ছাদে বাগান করতেও ঋণ পাবেন গ্রাহক। এ ছাড়া ভেনামি চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। মৎস্য খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৩ শতাংশ এবং প্রাণিসম্পদ খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে হবে।
ছাদ বাগান প্রসঙ্গে কৃষি ঋণ নীতিমালায় বলা হয়, ভবনের ছাদে বিভিন্ন কৃষি কাজ করা একটি নতুন ধারণা। বর্তমানে শহরাঞ্চলে যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত বাড়ির ছাদে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুল, ফল ও শাকসবজির যে বাগান গড়ে তোলা হয় তা ছাদবাগান হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, যাদের চাষের জন্য পর্যাপ্ত জমি নেই, কিন্তু নিজ হাতে কৃষি কাজ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য ছাদ কৃষি একটি উত্তম বিকল্প ব্যবস্থা। শহরাঞ্চলে বাড়ির ছাদে বাগান সৃষ্টির মাধ্যমে পরিবারের দৈনন্দিন খাদ্যের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব। পাশাপাশি ছাদ কৃষি পরিবেশ রক্ষা ও বায়ুদূষণ প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাদকৃষিতে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এ খাতের ঋণ দেওয়ার জন্য গ্রাহকের চাহিদা যাচাইবাছাই করে ব্যাংক কত টাকা ঋণ দেবে এবং কীভাবে আদায় করবে তা নির্ধারণ করবে।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রার বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) তাদের নিজস্ব অর্থায়নে যথাক্রমে ২৬ কোটি ও এক হাজার ৪২৩ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
নীতিমালায় কৃষি ঋণ বিতরণে এনজিও নির্ভরতা কমাতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ) ও ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ ব্যবহার করতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হতে হবে। আগে তা ছিল ৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এবার কৃষি ও পল্লী ঋণের চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৩০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা, কৃষি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এক হাজার ৪৭ কোটি টাকা পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে, যা অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৮১১ জন কৃষক এই কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ৩৬ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৫ জন ঋণ পেয়েছেন। আর ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৯৩৩ জন নারী কৃষক মোট ১২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন।
এ ছাড়া গত অর্থবছরে ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২২ হাজার ৪০২ কোটি টাকা এবং চর, হাওর প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৩ হাজার ৪৪৯ জন কৃষক প্রায় ১৮ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন।