অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ৭ অক্টোবর নতুন করে যুদ্ধ শুরুর পর সর্বাত্মক অবরোধ জারি করে ইসরায়েল। ফলে ইসরায়েল হয়ে দেশটিতে খাদ্য-পানীয়, ওষুধ, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। মিশরের রাফা ক্রসিং দিয়ে কিছু ত্রাণ প্রবেশ করলেও জ্বালানি ঢুকছে না। এ ছাড়া যেসব ত্রাণ যাচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। এ অবস্থায় সবচেয়ে দুর্ভোগে নারী ও শিশুরা। এমনকি পিরিয়ড বন্ধ রাখতে গাজার নারীরা ওষুধ খেতে পর্যন্ত বাধ্য হচ্ছেন।
অন্যদিকে প্রতি মুহূর্তে বৃষ্টির মতো বোমা পড়ায় বেশি দূরে যাওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। অবস্থা এমন যে, কোথাও যাওয়ার নেই, কিচ্ছু করার নেই। চরম এ মানবিক সংকটে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে উপত্যকাটির নারী ও শিশুদের।
স্বজনদের বাড়ি ও অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরগুলোতে ঠাসাঠাসি করে মাথা গুঁজেছেন লাখ লাখ গাজাবাসী। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে উপত্যকাটিতে যেসব পণ্যের সংকট সবচেয়ে প্রকট, তার মধ্যে অন্যতম জ্বালানি। এর অভাবে অন্য দশটি সমস্যার মতো গাজার পানিও বিশুদ্ধ করা যাচ্ছে না। ফলে ভেঙে পড়েছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা।
হামাস–ইসরায়েল সংঘাত শুরুর এক মাসের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হওয়ায় একেকটি বাড়িতে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ফলে শৌচাগার ব্যবহার করতে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ। পানি না থাকায় কয়েক দিন পর হয়তো একবার গোসলের সুযোগ পান।
আরেক দিকে সরবরাহ না থাকায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পনের মতো অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকট চলছে। তাছাড়া অনেক ফার্মেসি বন্ধ বা হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গোডাউনে থাকলেও স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পনের মতো পণ্য ফার্মেসিতে পৌঁছানো যাচ্ছে না।
এ পরিস্থিতিতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি মেনে নিয়ে বিকল্প পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন গাজার নারীরা। নিয়মিত ঋতুস্রাব বন্ধ রাখতে নানা ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন অনেকে।
গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের প্রসূতিবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়ালিদ আবু হাতাব বলেন, এসব ওষুধ খেলে শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ঋতুস্রাব বিলম্বিত হয়। তবে অনিয়মিত রক্তপাত, মাথা ঘোরা ও বমি ভাব, স্বাভাবিক ঋতুস্রাব চক্রে পরিবর্তন, মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা এবং মুড সুইংয়ের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।