ব্যবসায়িক লোভ আর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়াই সুমনের পেশা

0
5

ব্যবসায়িক লোভ আর ডিভোর্সি নারীদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে মোঃ মনিরুজ্জামান সরকার ওরফে সুমন(৪৬) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

বিবাহিত বা অবিবাহিত নারীদের প্রথমে অনলাইন ব্যবসায় অধিক মুনাফার লোভ দেখায়। পরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে ডিভোর্স দিয়ে অর্থ আদায় করাই যেন মনিরুজ্জামান ওরফে সুমনের প্রতারণার প্রধান কৌশল।

ভুক্তভোগী নারী সোনিয়া জানান,২০২০ সালে পরিচয় হয় সুমনের সাথে। প্রথমে আমাকে অনলাইনে ব্যবসার লোভ দেখায়।পরে সুমনের কথাবার্তা এবং বাহ্যিক ব্যবহারে প্রথমে আমি বুঝতেই পারিনি যে তার ভিতরে রয়েছে অর্থের লালসা।আমার স্বামীর মৃত্যুর পর ওই প্রতারক সুমন আমাকে অনলাইনে ব্যবসার ফাঁদে ফেলে এবং আমার সঙ্গে
প্রেমের অভিনয় করে। আমি সুমনকে বিশ্বাস করে ব্যবসার জন্য এককালীন প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নগদ প্রদান করি।এই টাকা পয়সার লেনদেনের বিষয়টি সুমন আমাকে ষ্ট‍্যাম্পে লিখিত দেন। এভাবে তার প্রতারণার কৌশলে আমি আকৃষ্ট হয়ে যাই।’

ব্যাংকে টাকা নেই অথচ প্রতারক মনিরুজ্জামান সরকার চেক দিয়েছেন প্রায় ৪০ লাখ টাকার।

ভুক্তভোগী নারী সোনিয়া আরও জানান,
আমার কাছ থেকে নেওয়া নগদ টাকার বিপরীতে প্রতারক সুমন মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডের ভুয়া চেকের মাধ্যমে প্রথমে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড এর অ্যাকাউন্ট নং ১১১৮১১১০০০০০৪৫৩ থেকে চেক বইয়ের মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকার একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে জানতে পারি তার একাউন্টে কোন টাকা নেই।এ বিষয়ে সুমনের সাথে যোগাযোগ করলে সে জানায় বর্তমানে জরুরী ব্যবসায়িক কাজে তার টাকা আটকে আছে। তাই বর্তমানে তার একাউন্টে টাকা নেই। এই বলে মেঘনা ব্যাংকের ওই অ্যাকাউন্টে আবারও গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরে ফের ৯ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকার একটি চেক দেন। ওই চেকের বিপরীতে টাকা তুলতে গিয়ে দেখা যায় এবারও তার একাউন্টে কোন টাকা নেই। বিষয়টি তাকে আবারো জানালে সে আমাকে আবারও মেঘনা ব্যাংকের লিমিটেডের ওই একই একাউন্ট থেকে গত ১৬/০৫/২৪ বছরের ১৬ মে ২০ লক্ষ টাকার আরো একটি চেক প্রদান করেন। এবারও ওই চেকটি উত্তোলন করতে গিয়ে দেখা যায় তার একাউন্টে কোন টাকাই নেই। ফলে আমি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করি যাতে ওই চেকটি আমাকে ডিজ অনার করে দেয়।

প্রতারক মনিরুজ্জামান সরকারের জাতীয় পরিচয় পত্র।

পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমাকে ওই চেকটি ডিজ অনার করিয়ে দিলে আমি সুমনের সাথে যোগাযোগের একাধিক বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। এক পর্যায়ে আমি বুঝতে পারি সুমন আমার সাথে প্রতারণা করেছে।এর পর থেকে প্রতারক সুমন আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমি বুঝতে পারি সুমন আমার সাথে এতদিন প্রতারণা করেছে। কিন্তু তত দিনে আমার সহায় সম্বল সব শেষ। আমি কোন উপায় না পেয়ে গণমাধ্যমে বিষয়টি জানাতে বাধ্য হয়েছি। এরপর আমি ন্যায় বিচারের জন্য আদালতে যাব।

তিনি আরো জানান আমার যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েছেই। ওই প্রতারক সুমন একাধিক মোবাইল নম্বর থেকে আমাকে বেশ কয়েকবার কল দিয়েছিল।(যার নম্বর- 01919608000,01713086668 এবং 01711478903)। পরবর্তীতে একাধিকবার তার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলেও কোন নাম্বারেই তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার পাওনা টাকা না দিয়ে উল্টো আমাকে বিভিন্ন সময়ে অজ্ঞাত একাধিক মোবাইল নম্বর থেকে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছ। আমি চাই প্রতারক সুমনের ফাঁদে যাতে আর কোন নারী না পড়তে পরে। তাই বিষয়টি আমি সবাইকে জানাতে চাই এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

কে এই প্রতারক মনিরুজ্জামান ওরফে সুমন?

এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়,মোঃ মনিরুজ্জামান সরকার ওরফে সুমন ঢাকার কখনো রামপুরা, কখনো খিলগাঁও আবার কখনো মগবাজার এলাকায় ভাড়া
থাকতেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে জানা যায় কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার আব্দুর রহিমের ছেলে সে।

তার দেশের বাড়িতে যোগাযোগ করলে স্বজনরা জানান বেশ কয়েক বছর যাবত তিনি বাড়ি ঘরে আসেন না এবং আত্মীয় স্বজনদেরও কোন খবর রাখেন না। তার একাধিক মোবাইল নম্বরে কল দিলেও সব সময়ই মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

নারীদের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করাই যার নেশা সেই মনিরুজ্জামান সরকার ওরফে সুমন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী জানান ২০২২ সালে মনিরুজ্জামান ওরফে সুমনের সাথে বিয়ে হয় আমার। এরপর তালাকের ভয় দেখিয়ে আমার মাধ্যমে বাবার বাড়ি থেকে প্রথম দফায় ৫ লক্ষ পরে আরো দুই লক্ষ টাকা নেয়। এরপর সে আমাকে ডিভোর্স দেয়। এক বছর পর আবার আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফের আমার কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা নেয়। এরপর থেকে সে লাপাত্তা হয়ে যায়। ভুক্তভোগী ওই নারী জানান,আমি চাই এই প্রতারক সুমন যেন আর কোন নারীকে ফাঁদে ফেলে ক্ষতি করতে না পারে। সমাজে মান ইজ্জতের ভয়ে অনেক কিছুই করতে পারি না।

বিএন/এসএএ//

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here