তীব্র গরম, শিশু রোগী বেড়ে দ্বিগুণ

0
91

‘তিন দিন হয়ে গেছে বাবুর জ্বর। কিছুতেই সারে না। শেষে ডেঙ্গু আর করোনা পরীক্ষা করাই। কিছুই ধরা পড়েনি।

কিন্তু বাপজান আমার দুর্বল হতে থাকে। জ্বরের মধ্যে এখন পেটে ব্যথা ও পাতলা পায়খানাও শুরু হয়েছে। তাই হাসপাতালে নিয়া আসছি।’

গরমে শিশু রোগী বেড়ে দ্বিগুণঢাকার যাত্রাবাড়ীর বেবি আক্তার এভাবে একমাত্র সন্তানের অসুস্থতার কথা জানান।

গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় তাঁর সঙ্গে কথা হয়। বারান্দায় তখন রোগী আর স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। চওড়া বারান্দার দুই পাশে অসুস্থ শিশুদের নিয়ে শুয়ে-বসে আছে অভিভাবক-স্বজনরা।

বেবি আক্তার বলেন, ‘বাচ্চা এখনো ঠিকমতো খাচ্ছে না।শুধু কান্নাকাটি করে। এ জন্য ডাক্তার স্যালাইন দিয়েছেন। এখানে তিন দিন ধরে ভর্তি। দুপুর হইলে গরমে টিকা যায় না। কী কষ্টের মধ্যে যে এখানে দিন যাচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না।

’ তিনি জানান, তাঁদের এলাকার অনেকেই জ্বর, ডায়রিয়া, জন্ডিস ও টাইফয়েডে আক্রান্ত। শিশু ওয়ার্ডের ভেতরেও একই অবস্থা। প্রতিটি শয্যায় দুজন করে রোগী তো আছেই, আবার দুই শয্যার মাঝে মেঝেতেও রোগী।

গরমে রোগী বেড়ে দ্বিগুণ

ঢাকা মেডিক্যালের বহির্বিভাগ থেকে জানা যায়, শিশুদের জন্য সেখানে আলাদা পাঁচটি বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগে দিনে গড়ে তিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা পায়। তীব্র গরমে কয়েক দিন ধরে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এখন প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ রোগীকে সেবা দিতে হচ্ছে। জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, ডায়রিয়া, জন্ডিস ও টায়ফয়েডের রোগী বেশি।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. শাহেদুর রহমান সোহাগ বলেন, গরমের কারণে বিভিন্ন রোগ নিয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে রোগী আসছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ শিশুর সর্দি-জ্বর, হাঁপানি। জন্ডিস, টাইফয়েড ও ডায়রিয়ার রোগীও তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালেও গরমে রোগী বেড়েছে। গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টায় ওই ১৪০ নম্বর কক্ষে মোট ২০ জন রোগী দেখেন ডা. আলী জ্যাকব আরসালান। এসব রোগীর মধ্যে ছয়জনের টায়ফয়েড, চারজনের জন্ডিস, তিনজনের ফুড পয়জনিং থেকে ডায়রিয়া হয়েছে। অন্যরা মৌসুমি জ্বর ও নিউমোনিয়া নিয়ে এসেছে।

ডা. আলী জ্যাকব আরসালান বলেন, তীব্র গরমে বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও পানি পানের কারণে মূলত রোগবালাই বেড়েছে, বিশেষ করে পানি থেকে।

তিনি বলেন, এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ পানির কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য করণীয় হলো বিশুদ্ধ বা ফোটানো পানি পান করা। সেখানে আবার নিয়ম মানতে হবে। অর্থাৎ পানিতে প্রথম বলক আসার পর অন্তত আধাঘণ্টা পানি ফোটাতে হবে। পানি ছেঁকে যে ফিল্টারে রাখা হবে, সেটিও যেন জীবাণুমুক্ত থাকে। এই গরমে কিছুতেই বাইরের খাবার খাওয়া যাবে না।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, টাইফয়েড, জন্ডিস দুটিই পানিবাহিত রোগ। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে মানুষের কাজকর্ম কিন্তু থেমে নেই। সবাই বাইরে যাচ্ছে। যখনই তেষ্টা পাচ্ছে, দোকান বা হোটেলের পানি খাচ্ছে। খোলা খাবার খাচ্ছে। মূলত এ কারণে রোগবালাই বাড়ছে।

তিনি বলেন, এই গরমে রাস্তার খোলা খাবার, শরবত, আখের রস—এগুলো খাওয়া যাবে না। পানি খেলে অবশ্যই ফোটানো পানি খেতে হবে। গরমে ঘরের খাবারও অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে যায়। সেটি খাওয়া যাবে না। একটু টাটকা জিনিস খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। বেশি বেশি পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here